আঞ্চলিক পরিবহণ কেন্দ্র হিসাবে উত্তর-পূর্বের শহরের অবস্থানকে মজবুত করতে বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপে বিমানবন্দর তৈরি করছে চিন।
লিয়াওনিং প্রাদেশিক সরকারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ডালিয়ান জিনঝোয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ২০ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে কৃত্রিম দ্বীপের বুকে তৈরি হবে।
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়ে ১২.৪৮ বর্গকিমি এবং জাপানের ওসাকা বিমানবন্দরের চেয়ে ১০.৫ বর্গকিমি বড় হতে চলেছে কৃত্রিম দ্বীপের উপর তৈরি ওই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি। উল্লেখ্য, হংকং এবং ওসাকা, উভয় বিমানবন্দরই কৃত্রিম দ্বীপে তৈরি।
‘এভিয়েশন কনসালট্যান্সি’র প্রতিষ্ঠাতা লি হ্যানমিংয়ের কথায়, ‘‘বন্দরনগরী ডালিয়ানের জনগণের জন্য এই বিমানবন্দর একটা বড় উপহার হতে চলেছে।’’
উল্লেখ্য, ডালিয়ান জিনঝোয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি এখনও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কেন কৃত্রিম দ্বীপে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর তৈরি করছে চিন?
অবস্থানগত কারণে চিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর-পূর্বের শহর ডালিয়ান। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া, এই দুই দেশের সঙ্গে চিন ব্যবসা করে মূলত এই বন্দর-শহরের মাধ্যমেই।
ডালিয়ানের জনসংখ্যা ৬০ লক্ষের বেশি। বোহাই স্ট্রেটের উত্তর প্রান্তে উপদ্বীপে অবস্থিত শহরটি তেল শোধনাগার, বন্দর, ব্যবসা এবং উপকূলীয় পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে অনেক দিন ধরেই।
আর তাই প্রতিবেশীদের সঙ্গে ব্যবসা মজবুত করতে এবং আঞ্চলিক পরিবহণ কেন্দ্র হিসাবে ডালিয়ানকে প্রাধান্য দিতে, সেই শহরের কাছেই ওই কৃত্রিম দ্বীপে বিমানবন্দর তৈরি করতে চাইছে ড্রাগনের দেশ।
সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, কৃত্রিম দ্বীপে তৈরি হওয়া ডালিয়ান জিনঝোয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চারটি রানওয়ে এবং একটি ন’লক্ষ বর্গমিটারের টার্মিনাল থাকবে।
ওয়েবসাইটে এ-ও বলা হয়েছে, উন্নত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিমানবন্দরটি আঞ্চলিক বিমান পরিবহণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই বিমানবন্দর দিয়ে প্রাথমিক ভাবে প্রতি বছর ৪ কোটি ৩০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। পরবর্তী কালে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে বছরে আট কোটি।
‘এয়ারপোর্টস কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল’-এর চিনা প্রতিনিধিদের দাবি, প্রতি বছর ১০ লক্ষ টন মাল ওই বিমানবন্দর দিয়ে রফতানি হবে।
ওয়াকিবহল মহলের দাবি, ডালিয়ান জিনঝোয়ান বিমানবন্দর তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৪৩০ কোটি ডলার। ২০৩৫ সালের মধ্যে বিমানবন্দরটির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলেও মনে করছেন কর্মকর্তারা।
অগস্ট মাস থেকেই বিমানবন্দর তৈরি করতে ৭৭ হাজার বর্গমিটার জমি পুনরুদ্ধার করার কাজ শুরু হয়েছিল। টার্মিনাল ভবনের শিলান্যাসের পরিকল্পনাও শুরু হয়েছে বলে খবর।
প্রসঙ্গত, ডালিয়নে আগে থেকেই একটি বিমানবন্দর রয়েছে। কয়েক দশক আগে সেটি তৈরি হয়েছিল। তখন সেই শহর জাপানিদের দখলে ছিল।
বর্তমানে ওই বিমানবন্দর দিয়ে বছরে প্রায় সাত লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন বলে সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
তবে নতুন বিমানবন্দর সব দিক থেকেই পুরনো বিমানবন্দরকে টেক্কা দেবে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও নতুন বিমানবন্দরটিকে নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, নতুন বিমানবন্দরটির আশপাশে অনেক পাহাড় রয়েছে, যে কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন বিমানচালকেরা। এমনকি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বিমানবন্দরে বিমান অবতরণ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, দ্বীপের বিমানবন্দর কোনও সেতু দিয়ে ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে ভূমিকম্প, সুনামি বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
বিমান সংক্রান্ত সংস্থা ‘সেন্টার ফর এভিয়েশন’ অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত ১৯০০ কোটি ডলার খরচ করে ২২টি নতুন বিমানবন্দর তৈরি করছে চিন।