পঞ্চায়েতের ‘ভয়’ দূর করাই চ্যালেঞ্জ

বৃদ্ধের কথা শেষ হলে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলেন তরুণ, তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তথা বিধায়ক ইব্রাহিম আলি।

Advertisement

 নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০২:১৭
Share:

দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচারে ইব্রাহিম আলি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

‘এবার ভোটটা দিতে পারব তো বাবা!’

Advertisement

রঙিন পাঞ্জাবি পরা এক যুবককে জড়িয়ে ধরে এভাবেই সন্দেহ প্রকাশ করলেন হলদিয়ার শালুকখালির বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব অবণী মাইতি (নাম পরিবর্তিত)। শিল্পশহর হলদিয়ার জনবহুল দুর্গাচক এলাকায় পাড়ার ভিতরে ঢুকতেই এমন ঘটনায় একটু হকচকিয়ে যান দলের কর্মী-সমর্থকরা।

বৃদ্ধের কথা শেষ হলে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলেন তরুণ, তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তথা বিধায়ক ইব্রাহিম আলি। বৃদ্ধকে আশ্বস্ত করে নিজের গলা থেকে লাল উত্তরীয় খুলে পরিয়ে দিলেন তাঁর গলায়। দু’পা এগোতেই ফের আটকে পড়লেন। টালির বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন অশীতিপর বৃদ্ধা। প্রার্থীর হাত ধরে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পুরসভার ভোটে বুথে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা (শাসকদলকে উদ্দেশ্য করে) বাড়ি চলে যেতে বলে। এবার ভোটটা যাতে দিতে পারি, সেই ব্যবস্থাটুকু অন্তত করে দাও।’’

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল থেকেই শিল্প আর বন্দর শহর হলদিয়ায় ভোটের প্রচারে বেরিয়ে বার বার এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল সিপিএম প্রার্থীকে। উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরে হলদিয়ার মাটি কামড়ে শিল্পাঞ্চল জুড়ে প্রচারে নেমেচেন ইব্রাহিম। গত কয়েক বছর নিজেদের শক্তঘাঁটি হিসেবে দাবি করে আসা হলদিয়াকে লোরসভায় পাখির চোখ করেছে সিপিএম। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল ২০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে সুতাহাটা ও হলদিয়া ব্লকে সিপিএম সমর্থকরা মনোনয়ন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল, মহকুমা শাসকের দফতর এবং বিডিও অফিসগুলিতে শাসক দলের লোকেদের বাধাদানের।

এবার লোকসভা ভোটের প্রচারে এই দুটোকেই ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে সিপিএম। তাতে প্রচারে সাড়াও মিলছে বলে দাবি সিপিএম প্রার্থীর। ইব্রাহিম বলেন, ‘‘গোটা শিল্পশহরে যত বাড়ি ঘুরেছি, সকলেরই একটাই আবেদ, ‘নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার যেন প্রয়োগ করতে পারি’। বিষয়টি অবশ্যই নির্বাচন কমিশনে জানাব।’’ যদিও ঘাঁটি গেড়ে হলদিয়ায় প্রচারের দাবি নস্যাৎ করেছেন ইব্রাহিম। তাঁর জবাব, ‘‘সাতটি বিধানসভা এলাকাকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছি। জয়ের লক্ষ্যে সব কেন্দ্রই আমার কাছে পাখির চোখ।’’

শিল্প শহরে তাদের প্রভাব বেশি সিপিএমের এমন দাবি মানতে নারাজ শাসক দল। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, পুরসভার ২৯টি ওয়ার্ড, হলদিয়া ও সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি এখনও তাদের দখলে। তা ছাড়া, লোকসভার উপনির্বাচনে তৃণমূলের সাংসদ ও প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী বড় ব্যবধানে ‘লিড’ পেয়েছিলেন।

হলদিয়ার পুর পারিষদ (বিদ্যুৎ) স্বপন নস্কর বলেন, ‘‘হলদিয়ায় সিপিএম বলে কিছু নেই। আসলে কেউ বাড়ি বাড়ি ভোট চাইতে গেলে তাঁকে সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়া শিল্পশহরের রীতিতে বাধে। তবে ইভিএমেই তারা বুঝিয়ে দেবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement