পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলিতে অবরোধ জারি রাখলেন কুড়মিরা। — নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়ার কুস্তাউরে থেকে অবরোধ তুলে নিলেও পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলিতে অবরোধ জারি রাখলেন কুড়মিরা। জানালেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। অন্য দিকে পুরুলিয়া থেকে কুড়মি নেতা অজিত মাহাতোর হুঁশিয়ারি, আপাতত সেখান থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হলেও ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে জঙ্গলমহলের তিন জেলায় ফের রেল অবরোধ হবে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অজিত।
একগুচ্ছ দাবি নিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে পুরুলিয়া এবং মেদিনীপুরে রেল অবরোধ করেছেন কুড়মিরা। ছ’দিন ধরে সড়ক অবরোধ চলছে। পুরুলিয়ায় বিক্ষোভ উঠে গেলেও জারি খেমাশুলিতে। কুড়মি নেতৃত্ব জানিয়েছে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা। সূত্রের খবর, কুড়মি নেতা রাজেশ মাহাতো পুরুলিয়ায় বৈঠক করতে গিয়েছেন। তিনি ফিরে এলে তবেই খেমাশুলির বিক্ষোভ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কুড়মি সমাজের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ চলবে।’’ অন্য দিকে আর একটি সংগঠনের সভাপতি সুদীপ কুমার মাহাতো বলেন, ‘‘দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামা হয়েছে। কোনও ইতিবাচক সুরাহা মেলেনি। অজিত মাহাতো আলাদা সংগঠনের। ওঁরা আন্দোলন তুলতে পারেন, আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
এ দিকে রবিবার পুরুলিয়ায় বিক্ষোভস্থল থেকে কুড়মি নেতা অজিত অভিযোগ করেছেন, এই নিয়ে কোনও ‘সদর্থক ভূমিকা’ নেয়নি রাজ্য। তাঁর কথায়, ‘‘পরিষ্কার কথা, রাজ্য সরকার গত পাঁচ দিনে একটা চিঠি চাপাটি করতে পারল না। আমাদের জন্য কোনও সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। অথচ ডিএম, এসপিকে বলা হচ্ছে বার বার, যাতে আমরা অবরোধ তুলি। আমরা দু’বার রেল অবরোধ করলাম। কিন্তু কেন এই পথে হাঁটতে বাধ্য হলাম, তার কারণ লেখার জন্য এক লাইন ক্ষমতা হল না।’’ তিনি এই অভিযোগও করেছেন যে, আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের ছেলেদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’
এর পরেই অজিত জানিয়ে দেন, আপাতত পুরুলিয়া থেকে অবস্থান তুলে নিলেও ভবিষ্যতে ফের আন্দোলনের পথে নামবেন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘আপাতত রেলের অবস্থান তুলে নিলাম। আগামী দিনে তিন জেলায় রেল অবরোধ হবে। সরকার কিছু না করলে লড়াই চলবে।’’ কুড়মি নেতা এও জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করছেন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক মিটিং হচ্ছে, কী লাভ হচ্ছে। তাই প্রত্যাহার করলাম।’’
তফসিলি উপজাতি এবং সারনা ধর্মের স্বীকৃতি চেয়ে গত পাঁচ দিন ধরে রেল অবরোধ করছেন কুড়মিরা। শ্যামাচুলির কাছে জাতীয় সড়ক ছ’দিন ধরে অবরোধ চলেছে। অবরোধের জেরে দূরপাল্লার ট্রেন এবং লোকাল ট্রেন বাতিল করে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে। পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রেনগুলোও চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খেমাশুলির রেল স্টেশন এবং সেই সংলগ্ন জাতীয় সড়ক অবরোধের জেরে সমস্যায় পড়েন মানুষজন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালায় রেল এবং জেলা প্রশাসন। তার পরেই রবিবার পুরুলিয়ায় আন্দোলন উঠে যায়। তবে খেমাশুলিতে এখনও জারি রয়েছে বিক্ষোভ।