কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
শুভেন্দু অধিকারীর সমালোচনার বদলে ভোট-পরবর্তী সময়ে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূল নেতাদের আত্মসমালোচনার এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর পরামর্শ দিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের নিজেদের ঘর সামলে বিধানসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তাও দিয়েছেন তিনি। প্রায় ভর্ৎসনার সুরে দাবি করেছেন, জেলায় দলের হারের পিছনে অন্তর্ঘাতের বড় ভূমিকা রয়েছে।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশের সমর্থনে মঙ্গলবার তৃণমূলের তমলুক ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে তমলুকের নিমতৌড়ি স্মৃতি সৌধে প্রস্তুতি সভায় এসেছিলেন কুণাল। সেখানে জেলায় দুই আসনে তৃণমূলের হারের জন্য জেলার তৃণমূল নেতাদের কাঠগড়ায় তুলেছেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি, মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী, প্রাক্তনমন্ত্রী তথা তমলুকের বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র ও প্রাক্তন মন্ত্রী তথা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর-সহ দুই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, শাখা সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব ও ব্লক সভাপতিরা।
সেখানে কুণালের মুখে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি, দু’টি আসনই আমাদের জেতা উচিত ছিল। আমি আবারও বলছি, শুভেন্দু অধিকারী আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে গিয়েছেন। তাঁর সমালোচনা আমরা করব, করি। তবে শুভেন্দুর সমালোচনা পরে করবেন। আগে আমাদের ঘর সামলাতে হবে। আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা দেখতে হবে। ভোটে এই দু’টি আসন হেরেছি আপনাদের অন্তর্ঘাতে। যদি সবাই এত বড় বড় নেতা, তা হলে কেন জেতা হল না দু’টো আসন?’’
জেলায় বিজেপি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়েছে বলেও এ দিন সমালোচনা করেন কুণাল। অভিযোগ করে বলেন, সারা রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রীর মতো সামাজিক প্রকল্পের ফল দল পেয়েছে, ব্যতিক্রম শুধু পূর্ব মেদিনীপুর। তাঁর কথায়, ‘‘এই জেলায় শুধু এ ওর লোক, সে তার লোক! আমি শুধু আমার চার জনকে নিয়ে চলব। আর অন্য ফুটপাতে ১৬ জন চলবে। এই ভাবে চললে এই জেলায় ঘুরে দাঁড়ানো যাবে না। এতজন সিনিয়র নেতৃত্ব আছেন। আপনারাই পারবেন, আপনারাই করবেন।’’ এ দিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন সাধারণ সম্পাদক। জানান, ২১-এর পর সংগঠন নিয়ে পদক্ষেপ করবেন রাজ্য নেতৃত্ব।
কুণাল বলেন,‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত আমরা সবাই চেষ্টা করেছি। লোকসভা নির্বাচনেও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আমাদের আত্মসমালোচনার জায়গা আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও খামতি রাখেননি। তা হলে আমরা দু’টো আসন বার করতে পারিনি কেন? কিছু কিছু জায়গায় আমাদের ভুল হচ্ছে। আমি ঠিক না আপনি ঠিক, এই করতে গিয়ে আমরা খাল কেটে কুমির এনে ফেলেছি। ইগো রাখা যাবে না।” এ দিন কুণালের বক্তব্য নিয়ে তমলুক লোকসভা নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র বলেন,‘‘রাজ্য নেতৃত্ব যা মূল্যায়ন করেছেন তা উনি বলেছেন। আমরা ব্যর্থ হয়েছি, এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই।”