জেলার তালিকায় ৯ নম্বরে রয়েছে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র।
মূল্যায়ন হয়েছে রাজ্যের ৩১৫টি হাসপাতালের (মহকুমা, সুপার স্পেশালিটি, গ্রামীণ হাসপাতাল)। বেরিয়েছে মার্কশিট। সে মূল্যায়নে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কিছু হাসপাতালের ‘বিশ্রী’ চেহারা সামনে এসেছে। প্রথম দশে রয়েছে জেলার একটি হাসপাতাল। প্রথম একশোয় ওই একটি ছাড়া জেলার আর কোনও হাসপাতালই নেই! প্রথম দু’শোর মধ্যেও রয়েছে মাত্র তিনটি হাসপাতাল। এই মূল্যায়ন ‘সুশ্রী’ (কায়াকল্প) প্রকল্পের। স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করাচ্ছেন, মূলত হাসপাতালের পরিষেবা এবং পরিবেশের দিকগুলি ঠিকঠাক থাকলে ‘সুশ্রী’তে প্রথম সারিতে স্থান মেলে।
‘সুশ্রী’তে তো সার্বিকভাবে জেলার ফলাফল ভাল নয়? সদুত্তর এড়িয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলেন, ‘‘জেলার মধ্যে প্রথম হয়েছে ঘাটালের বিদ্যাসাগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। রাজ্যের মধ্যে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্থান নবম।’’ জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, ‘‘এই পুরস্কার পেতে গেলে কয়েকটি শর্তপূরণ করতে হয়। কয়েকটি মানদণ্ড রয়েছে। জেলার কিছু হাসপাতাল এই সব শর্তপূরণ করেছে। নির্ধারিত মানে পৌঁছেছে। কী মানদণ্ড? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে ৬টি মানদণ্ড রয়েছে। যেমন এক, পরিকাঠামোগত মান ভাল হতে হবে। দুই, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভাল হতে হবে। তিন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা ভাল হতে হবে। চার, ইনফেকশন কন্ট্রোল ব্যবস্থা ভাল হতে হবে। পাঁচ, পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে এগিয়ে থাকতে হবে। ছয়, স্বাস্থ্য- সচেতনতা প্রসারে উদ্যোগী হতে হবে। মূল্যায়নে অন্তত ৭০ শতাংশ নম্বর পেলে তবেই পুরস্কারের ‘দৌড়ে’ শামিল হওয়া যায়। একাধিক স্তরে মূল্যায়ন হয়। প্রথমে আশেপাশের সমপর্যায়ের কোনও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মূল্যায়ন করে। পরে ওই মূল্যায়ন রিপোর্ট জেলায় পৌঁছয়। ৭০ শতাংশ নম্বর থাকলে পরে জেলাস্তরের দল সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে মূল্যায়নে যায়। জেলাস্তরের দলের মূল্যায়নেও যদি ৭০ শতাংশ নম্বর মেলে তবেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের নাম ‘সুশ্রী’ পুরস্কারের জন্য রাজ্যে প্রস্তাব করা হয়।
রাজ্যের মূল্যায়নে পশ্চিম মেদিনীপুরের সার্বিক ফলাফল ভাল নয়। প্রথম দশে রয়েছে একটি হাসপাতাল, ঘাটালের বিদ্যাসাগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ৬০০ নম্বরের মধ্যে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পেয়েছে ৫৮২। অর্থাৎ, ৯৭ শতাংশ নম্বর। প্রথম একশোয় ওই একটি ছাড়া জেলার আর কোনও হাসপাতাল নেই। একশো থেকে দু’শোতম স্থানের মধ্যে রয়েছে তিনটি হাসপাতাল। যথাক্রমে হিজলি গ্রামীণ হাসপাতাল, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল এবং দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতাল। দু’শো থেকে তিনশোতম স্থানের মধ্যে রয়েছে ছ’টি হাসপাতাল। যথাক্রমে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল, ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল, দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতাল, কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতাল এবং কেশিয়াড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল। দেখা যায়, রোগী স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর থাকে না অনেক হাসপাতালের। পরিষেবা এবং পরিকাঠামোর মানোন্নয়নেও নজর থাকে না। অথচ জেলার কমবেশি সব হাসপাতালের দিনে প্রচুর রোগী আসেন। অনেক হাসপাতালে নূন্যতম পরিষেবাও মেলে না। দেখা যায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডের মধ্যে থাকা শৌচাগারগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। বেশ কয়েকটি ব্যবহারের অযোগ্য। সব শয্যায় বেডকভার নেই। সব শয্যায় মশারিও নেই। ওয়ার্ডের আশেপাশেই যত্রতত্র দাহ্যবস্তু পড়ে রয়েছে। বেশ কয়েকটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার অব্যবহৃত। কয়েকটি ওয়ার্ডের মেঝেতে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। অথচ, এ সব মেরামত করা হয়নি। পরিবেশের সৌন্দর্যায়নের দিকেও নজর দেওয়া হয়নি। রোগীর পরিজনেদের জন্য পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ছবিটা পাল্টাতেই এমন মূল্যায়ন এবং পুরস্কার।