পুজোর সময়ে পর্যটকদের ভিড়। বেলপাহাড়িতে। নিজস্ব চিত্র।
পুজোর আগে খড়গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে টানা পাঁচদিন রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়েছে। ছিল নিম্নচাপের শঙ্কাও। তা সত্ত্বেও বৃষ্টি অসুরকে উপেক্ষা করেই ঝাড়গ্রামে পুজোর পর্যটনে লক্ষ্মীলাভ হয়েছে! এমনই দাবি, পর্যটন সংস্থা থেকে হোটেল, হোম স্টে-র মালিকদের। তবে সকলেই মানছেন, গতবারের পুজোর মত অতটা চাপ এ বার পুজোয় ছিল না। পর্যটন দফতর স্বীকৃত ঝাড়গ্রাম টুরিজ়ম-এর কর্তা সুমিত দত্ত বলছেন, ‘‘গত দু’বছর রাজ্য ও দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে করোনার বিধিনিষেধ থাকায় কলকাতা ও শহরতলির পর্যটকরা ঝাড়গ্রামে ভিড় করেছিলেন। এ বার করোনাহীন পরিস্থিতিতে রাজ্য ও দেশের সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রেই পর্যটকরা যাচ্ছেন। সেই কারণে, পুজোর মরসুমে গতবারের মত রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক হয়নি। তবে ভালই পর্যটক এসেছেন। সকলেরই লক্ষ্মীলাভ হয়েছে।’’
ঝাড়গ্রাম জেলায় হাতে গোনা সরকারি ও বেসরকারি লজ-হোটেল ও রিসর্ট ছাড়াও এতদিন ছিল গোটা তিরিশ হোম স্টে। চলতি বর্ষেই জেলায় চালু হয়েছে আরও ৭১টি হোম স্টে। ফলে পর্যটকদের থাকার সমস্যা কার্যত মিটেছে। ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলেন, ‘‘জেলায় হোম স্টের সংখ্যা বেড়েছে। তাই এ বার পুজোয় পর্যটকদের চাপ বোঝা যায়নি। বেশিরভাগ অগ্রিম বুকিং রয়েছে পুজোর ছুটি পর্যন্ত। শীতের অগ্রিম বুকিংও চলছে।’’ হোটেল মালিক সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক তথা অরণ্যসুন্দরী অতিথিশালার মালিক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পুজোয় ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল। আমার অতিথিশালায় ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছে।’’ পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এবার পর্যটকদের একাংশ পুজোয় চারদিন কিংবা পাঁচদিন পর্যন্ত ঝাড়গ্রামে নিরিবিলিতে অবসর যাপন করে গিয়েছেন। ভাড়ার গাড়ির চালক অর্ক প্রামাণিক বলছেন, ‘‘বৃষ্টির মধ্যেও সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে অনেক পর্যটককে বেলপাহাড়ি নিয়ে গিয়েছি।’’
এক সময় বেলপাহাড়ি জুড়ে ছিল মাওবাদীদের আতঙ্ক। এখন সেখানেই পর্যটনের বাড়বাড়ন্ত। কাঁকড়াঝোর, আমলাশোল সহ বেলপাহাড়ির বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু হোম স্টে। আমলাশোলে পাহাড় ও প্রাকৃতিক ঝর্না লাগোয়া একটি হোম স্টের কর্ত্রী সায়ন্তনী দত্ত বলেন, ‘‘তিনটি কটেজে ১৮ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পুজোয় সবই ঠাসাঠাসি ভর্তি ছিল। কালীপুজো অবধি বুকিং রয়েছে। শীতেও অগ্রিম বুকিংও চলছে। পুজোয় খুব ভাল লাভ হয়েছে।’’ একই দাবি কাঁকড়াঝোরের একটি হোম স্টে-র মালিক প্রদীপ মাহাতোর। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলছেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও পুজোয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় পর্যটক এসেছেন। এখনও আসছেন। শীতের অগ্রিম বুকিংও হচ্ছে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে বিকল্প রুজিও এখানে গড়ে উঠেছে। এটা খুবই সদর্থক দিক।’’
পুজোর ছুটিতে পর্যটকেরা এসেছেন মেদিনীপুরে, তার আশেপাশেও। পাথরা, কর্ণগড়ের মত এলাকায় গিয়েছেন অনেকে। পাথরা মেদিনীপুরের অন্যতম পর্যটনস্থল। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কংসাবতী নদী। নদীর পাড়ে কতগুলি প্রাচীন মন্দির। সে সব মন্দিরে টেরাকোটার নিখুঁত কাজ। মন্দিরময় পাথরায় যেন প্রতি পদে ইতিহাসের হাতছানি। পাথরাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা হচ্ছে। অন্যদিকে, শালবনির কর্ণগড়ে কতগুলি সুদৃশ্য কটেজ রয়েছে। রয়েছে ক্যাফেটেরিয়াও। নতুন সাজে সেজে ওঠা রানি শিরোমণির স্মৃতি বিজড়িত কর্ণগড়ে পুজোর আগে-পরেও ভিড় ছিল ভালই। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ছুটিতে পর্যটনস্থলগুলিতে অনেকেই বেড়াতে এসেছেন।’’ পুজোর ঠিক আগে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে গড়বেতার গনগনি পর্যটন কেন্দ্রের উদ্বোধন হলেও, বাইরের পর্যটকদের সেভাবে দেখা মেলেনি গনগনিতে।
(তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য ও রঞ্জন পাল)