তৃণমূলের কার্যালয়ে ব্লক সভাপতিকে ঘিরে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখনও মেলেনি দলের তরফে প্রতীক। ফলে আদৌ তাঁরা দলের তরফে প্রার্থী হচ্ছেন কি না, তা নিয়ে ধন্দ নন্দীগ্রামে। যার জেরে সোমবার তৃণমূলের নন্দীগ্রাম ব্লক অফিসে হল ফের বিক্ষোভ। তাতে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেল নন্দীগ্রাম ভূমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা শেখ সুফিয়ানের জামাই তথা মহম্মদপুরে গ্রাম পঞ্চায়েতের টানা ১০ বছরের প্রধান শেখ হাবিবুলকে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দলের তরফে কর্মীদের মতামত নিয়ে টিকিট বণ্টন করা হবে বলে বলা হলে হলেও বাস্তবে টাকার বিনিময়ে পঞ্চায়েতের টিকিট বিলি করা হচ্ছে।
এদিন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ দলীয় পতাকা নিয়েই দলের ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান। অফিসে তালা দিয়ে ধর্নায় বসে পড়েন এবং সরাসরি দলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত গর্গের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। কয়েক দিন আগেই শেখ সুফিয়ানের বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁকে জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী করায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। সেই বিক্ষোভের পর দিনই সুফিয়ানকে দেওয়া টিকিট প্রত্যাহার করা হয়। এ দিনের বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা সেই সুফিয়ানের জামাই শেখ হাবিবুল জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পরে ব্লক নেতৃত্বের নির্দেশক্রমে বুথস্তর থেকে নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই তালিকা অনুযায়ী কিছুই করেননি ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মনোনয়ন জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনও দলের প্রতীক পাইনি। এদিকে প্রতীক জমা দেওয়ার দিন শেষ হতে চলল। যতক্ষণ না পর্যন্ত দলের প্রতীক পাচ্ছি, ততক্ষণ তো প্রার্থী বলে নিশ্চিন্তও হতে পারছি না।’’
দলের কারা প্রার্থী এবং প্রতীক পাবেন, তাঁদের নাম এ দিন সন্ধ্যায় ব্লক সভাপতি ঘোষণা করবেন বলে তৃণমূল সূত্রে প্রথমে জানা গিয়েছিল। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত তেমন কোনও ঘোষণা হয়নি। এ দিন হাবিবুলের বিক্ষোভকে কার্যত সমর্থন করে নন্দীগ্রাম থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের বিদায়ী সদস্য নাসিমা খাতুন বলেন, "এই সব কিছুরই পিছনে রয়েছেন নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ। আমি দু’বারের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এবং একবার জেলা পরিষদের সদস্য। দল এবং এলাকার উন্নয়নে গত ১৫ বছর নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করার পরও আমাকে টিকিট দেওয়া হয়নি।’’ তাঁর দাবি, রাজ্য ও জেলাস্তর থেকে তাঁর নাম মনোনীত হলেও বাপ্পাদিত্য ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জেলা পরিষদের টিকিট অন্য একজনকে বিক্রি করে দিয়েছেন। নাসিমা বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছি।’’
ভোটের আগে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের এমন বারবার বিক্ষোভ সামনে আসায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকে দূর্বল করছে বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। যদিও বাপ্পাদিত্য গর্গকে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা পূর্ব মেদিনীপুরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কুণাল বলেন, ‘‘গ্রাম সংসদ সভার কয়েকটা টিকিট নিয়ে গন্ডগোল ছিল। সমস্যা মিটে গিয়েছে।’’ কিন্তু প্রতীক জমা দেওয়ার শেষ পর্বেও দলীয় প্রার্থীদের এখন তা দেওয়া হয়নি কেন? কুণালের জবাব, ‘‘নানা কারণে দেরি হতে পারে। প্রতীক দেওয়ার ব্যাপারটি টেকনিক্যাল ব্যাপার। ঘোষিত প্রার্থীদের প্রতীক দেওয়া হবে। প্রতীক জমা দেওয়ার ব্যাপারে শেষ তারিখ বা পরের তারিখের কোন ব্যাপার নেই। সঠিক সময়ে তা জমা পড়ে যাবে।