Goaltore

ভারতের হয়ে গলা ফাটায় অন্য পাকিস্তান

নামে নেই কোনও মৌজা, নামের উল্লেখ নেই কোনও নথিতেই। পাড়া ঘুরে কোথাও দেখা গেল না এই নামের চিহ্ন। কিন্তু পাড়ার ছোট-বড় সকলে জানে তারা পাকিস্তানের বাসিন্দা।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৯:৪১
Share:

পাড়ার নাম পাকিস্তান। নিজস্ব চিত্র।

ভারতের বিশ্বকাপ জয়ে উচ্ছ্বসিত এই পাকিস্তান!

Advertisement

যে রাতে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের হাতে উঠেছিল টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি, সেই রাতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল পাকিস্তানের অরুণ, বলরামরা। উড়েছিল তেরঙ্গা পতাকা। বিশ্বকাপে যে দিন পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত, সেই রাতেও উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল এই পাকিস্তানে। এই পাকিস্তান ভারতের। গড়বেতা ২ অর্থাৎ গোয়ালতোড় ব্লকের পিয়াশালা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত চাঁদাবিলা গ্রাম সংসদের একটি পাড়ার নাম পাকিস্তান। এই নামে নেই কোনও মৌজা, নামের উল্লেখ নেই কোনও নথিতেই। পাড়া ঘুরে কোথাও দেখা গেল না এই নামের চিহ্ন। কিন্তু পাড়ার ছোট-বড় সকলে জানে তারা পাকিস্তানের বাসিন্দা।

চাঁদাবিলা মৌজার এই পাড়া ঘুরে জানা গেল বহিরাগতদের আগমণেই না কি হয়েছে পাকিস্তান নাম। এই পাড়ার একই নামের দুই প্রবীণ বাসিন্দা আনন্দ লোহার বললেন, "শুনেছি স্বাধীনতার সময়ে পূর্ববঙ্গ থেকে কয়েকটি পরিবার এসে এখানে থাকতে শুরু করেছিল, পরে তারা অন্যত্র পালিয়ে যায়। তখন থেকেই এই পাড়াকে সবাই পাকিস্তান বলত, সেই নামটাই ছড়িয়ে যায়।" কত আগে? তাঁরা মনে করে বললেন, "সেই স্বাধীনতার সময় হবে।" উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ অরুণ লোহার বলল, ‘‘স্কুলে বা আশেপাশের এলাকার অনেকেই আমাদের পাকিস্তানি বলে। তবে আমাদের গ্রামের নাম-ঠিকানা সবই চাঁদাবিলা।" অনেকে অবাকই হন পাড়ার নাম পাকিস্তান শুনে। কেন এই নাম অনেকসময়ে তার ব্যাখ্যাও দিতে হয় গ্রামবাসীদের।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক লোকসংস্কৃতির গবেষক শঙ্কর মহাপাত্র বলছেন, "যেহেতু এই নামে কোনও প্রামাণ্য তথ্য বা নথি নেই, তাই নামকরণের বাস্তবতাও কেউ খতিয়ে দেখেননি।" স্থানীয় চাঁদাবিলা গ্রামের বাসিন্দা ভূমি দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মুরলীমোহন দাস বলেন, " কী ভাবে এই মৌজার একটা পাড়ার নাম পাকিস্তান হয়েছে তা বলতে পারব না।"

পাকিস্তান পাড়ায় সাকূল্যে ৯০-১০০ টি পরিবারের বাস। গ্রামের বুক চিরে চলে গিয়েছে পঞ্চায়েতের ঢালাই রাস্তা। গ্রামের তৃণমূল কর্মী গৌতম লোহার বললেন, "পাড়ার নাম নিয়ে কাউকে বিব্রত হতে হয় না।" পাকিস্তান পাড়ায় বাড়ি বিজেপি নেত্রী পদ্মাবতী লোহারের। তিনি বলেন, " নামে কিছু যায় আসেনি। এই পাড়ার ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। পাড়ার পরিবার গুলি বেশিরভাগই খেটে খাওয়া। রাস্তা, জল, আলো, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র হলেও আবাসের বাড়ি হয়নি অনেকের।" পাকিস্তান পাড়া চাঁদাবিলা বুথের অন্তর্গত। গতবছর পঞ্চায়েত ভোটে এই বুথে তৃণমূল জিতলেও, এবা রের লোকসভায় সামান্য ভোটে 'লিড' নিয়েছে বিজেপি। পঞ্চায়েত সদস্য তথা পিয়াশালা অঞ্চলের প্রাক্তন প্রধান মিতা লোহার বলেন, "পূর্ব পাকিস্তান থেকে কেউ এসেছিল বলে পাড়ার নাম পাকিস্তান হতে পারে। সেই নামই মুখে মুখে প্রচার হয়েছে। পাকিস্তান পাড়ায় উন্নয়ন হয়েছে’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement