চন্দ্রকোনা রোডের ডিগ্রি এলাকার যক্ষ্মা হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র
যক্ষ্মা হারবে, জিতবে দেশ। এই স্লোগান সামনে রেখে ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। শনিবার বাজেট-প্রস্তাবে সেই স্লোগান দিয়েই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, যক্ষ্মা নির্মূলীকরণ কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করা হবে।
এই ঘোষণায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডের ডিগ্রি এলাকার মানুষজন। কারণ, এই এলাকার যক্ষ্মা হাসপাতাল দীর্ঘ দিন ধরেই রুগণ্। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, বন্ধ হয়ে গিয়েছে অধিকাংশ ওয়ার্ড, চুরি যাচ্ছে দরজা-জানলা। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, সরকারের অবহেলাতেই রাজ্যের অন্যতম এই যক্ষ্মা হাসপাতালের এমন পরিণতি।
পঞ্চাশের দশকে বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে চন্দ্রকোনা রোডের ডিগ্রিতে গড়ে তোলা হয় যক্ষ্মা হাসপাতাল। গোড়ায় বিরাট পরিকাঠামো ছিল। ১৫টি ওয়ার্ড, ৩০০ শয্যা, ১০জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বড় বড় স্টাফ কোয়ার্টার, তৈরি হয়েছিল সবই। একসময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যক্ষ্মা রোগীরা এখানে আসতেন আরোগ্য লাভের আশায়। হাসপাতালের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছিল ‘আফটার কেয়ার কলোনি’। সুস্থ হওয়ার পরে রোগীদের নজরদারিতে রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ছিল সেখানে।
সেই হাসপাতালই এখন রোগ-জর্জর। ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টি ওয়ার্ড চালু আছে। কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। যে ৩জন চিকিৎসক আছেন, তাঁদের যক্ষ্মার আধুনিক চিকিৎসার কোনও প্রশিক্ষণই নেই। অথচ থাকার কথা ১০ জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। এই অবস্থা চলছে বেশ কয়েকবছর ধরেই। নেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, নেই নিরাপত্তারক্ষীও। ওয়ার্ড বন্ধ, চিকিৎসক নেই, ফলে রোগীও তেমন আসেন না। ৩১৬টি শয্যা আর এখন রোগী আছেন সাকূল্যে ৫০ জন। বহির্বিভাগ চলে কোনওরকমে। ওষুধপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় রোগীদের। ঝোপজঙ্গলে ঢাকা পড়ছে ভাঙাচোরা স্টাফ কোয়ার্টার। গোটা চত্বর অরক্ষিত। চুরি হচ্ছে দরজা, জানলা, অন্য সরঞ্জাম। দখল হয়ে যাচ্ছে হাসপাতালের জায়গা। অব্যবহৃত কোয়ার্টারও হচ্ছে বেহাত। কুকুর, বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাসপাতাল চত্বরে।
হাসপাতালের একটি সূত্রে খবর, সরকারি নজরদারির অভাবে হাসপাতালের পরিকাঠামোই ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ হয়নি। চিকিৎসকদের সরকারি প্রশিক্ষণ দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়নি। চিকিৎসার আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম সরবরাহ হয়নি বহুদিন। হাসপাতালের বর্তমান সুপার বিশ্বনাথ দাস এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা এখন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়েও চিকিৎসা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাই এই হাসপাতালের উপর যক্ষ্মারোগীরা আর তেমন নির্ভরশীল হচ্ছেন না।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরারও বক্তব্য, ‘‘যক্ষ্মা রোগীদের তো এখন আর আগেকার মতো আলাদা করে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। খুব গুরুতর রোগী ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি করাও হয় না। নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চলে প্রায় সারা বছর। ’’
তবে ডিগ্রির বহু পুরনো এই যক্ষ্মা হাসপাতালের দুর্দশা কাটুক, চাইছে স্থানীয় গড়বেতা ৩ ব্লক প্রশাসন। কয়েকমাস আগে বিডিও অভিজিৎ চৌধুরী পরিদর্শন করেছিলেন এই হাসপাতাল। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের পরিকাঠামোমূলক কিছু সমস্যা আছে। সে সব কাটাতে হবে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকাশদীপ সিংহের বক্তব্য, ‘‘ডিগ্রির যক্ষ্মা হাসপাতালের বহু ওয়ার্ড বন্ধ। কোয়ার্টারগুলিও নষ্ট হচ্ছে। সেখানে উন্নতমানের চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার।’’