—প্রতীকী চিত্র।
সরকারি আধিকারিক পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠল। ঘটনায় প্রতারিত ব্যক্তি খড়্গপুর এবং প্রতারকেরা কলকাতার বাসিন্দা হলেও এই মামলায় নাম জড়িয়েছে কাঁথি পুরসভায়। কারণ, প্রতারকরা এই পুরসভাতেই করণিকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। অধিকারী পরিবারের ছোট সদস্য সৌমেন্দু অধিকারী পুরপ্রধান থাকাকালীন কাঁথি পুরসভার একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সম্প্রতি সামনে এসেছে। এখন তৃণমূল পরিচালিত নতুন বোর্ডের আমলে এমন নিয়োগ প্রতারণার নাম জড়াল এভাবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাতে কাঁথি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মনোজ কুমার দে নামে খড়্গপুরের মালঞ্চ এলাকার এক বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে অমরনাথ সিংহ এবং বিনোদ কুমার অগ্রবাল নামে দু’জনের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে কাঁথি থানার পুলিশ। অমরনাথ কলকাতার ফুলবাগান এবং বিনোদ বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা।
মনোজ জানাচ্ছেন, চলতি বছর ১০ জানুয়ারি তাঁর সঙ্গে কলকাতার বড় বাজারে একটি খাবারের দোকানে অমরনাথের পরিচয় হয়। সে নিজেকে নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের আধিকারিক পরিচয় দেয় এবং মনোজকে জানায়, তার সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। মনোজের দাবি, এর পরে তাঁকে একটি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে জানানো হয়ে, কাঁথি পুরসভায় করণিকের চাকরি করিয়ে দেওয়া হবে। সে জন্য রাজ্য সরকারের ত্রাণ তহবিলে নগদ ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে।
মনোজ জানান, কথা মতো মাফিক ২১ জানুয়ারি ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে খড়্গপুর থেকে কাঁথিতে আসেন। সেখানে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে অমরনাথ তাঁর সঙ্গে আরেক ব্যক্তির পরিচয় করিয়ে দেয়। তার নাম বিনোদ অগ্রবাল। সে নিজেকে অমরনাথের অধস্থন কর্মী বলে পরিচয় দেয়। প্রতিশ্রুতি মতো ওই গাড়িতে মনোজ তাদের নগদ ১০ লক্ষ টাকা দেন। মনোজকে একটি রসিদও দেওয়া হয়। তাতে রাজ্য সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের সিল ছিল। এমনকী, নিজেকে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে রসিদে স্বাক্ষর করে এবং নিজের সিল দেয় অমরনাথও। মনোজ বলছেন, ‘‘টাকা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর অ্যাপয়েন্টমেন্ট চিঠি চেয়ে বারবার ঘুরেছি। শেষ পর্যন্ত অগস্ট মাসে আবার আমাকে কাঁথিতে ডাকা হয়। সেখানে আমাকে নানা রকম হুমকি দেয় অমরনাথ এবং বিনোদ দুজনে। পরবর্তীকালে বড় বাজারে এলাকায় গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে বুঝতে পারি প্রতারিত হয়েছি।’’ এরপর মনোজ কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে কাঁথির এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, ‘‘একটি অভিযোগ এসেছে। তার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’’
অতীতে কাঁথি পুরসভার একাধিক বেনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। সবকটি অভিযোগের তদন্ত করছে পুলিশ। তবে এই প্রথমবার কাঁথি পুরসভায় চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠল। আর সেখানে রাজ্য সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের সিল ব্যবহারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়েছে। এই নিয়োগ দুর্নীতির পিছনে রাজনীতির যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে চলছে বিস্তর জল্পনা। বিধায়ক তথা কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি অরূপ দাস বলছেন, ‘‘প্রশাসন রয়েছে বলে কেউ মনে করছেন না। তার জন্য অনায়াসে সব জায়গাতেই চুরি হচ্ছে অবাধে।’’ তৃণমূল পরিচালিত কাঁথি পুরসভার প্রধান সুবল মান্না অবশ্য বলছেন, ‘‘এ ধরনের অভিযোগ প্রথম শুনলাম। আমরা চাই পুলিশ তদন্ত করুক এবং দোষীদের শাস্তি হোক।’’