শীতের স্নান। জামবনির গদরাশোলে। নিজস্ব চিত্র
মন ভাল নেই মকরে! জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের প্রধান উৎসব মকর-পরবে মন ভাল নেই বনাঞ্চলবাসী মানুষজনের। গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত হাতির দলের উৎপাতে জেরবার। মাঠের ধান সাবাড় করার পরে এখন হাতিদের নজর পড়েছে খেতের আনাজের উপর।
সোমবার ভোরে জামবনি বনাঞ্চলের শুশনি গ্রামের বিস্তীর্ণ আনাজ খেত তছনছ করে দিয়েছে ১৫টি হাতির দল। রবিবার রাতে হাতির দলটি ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের পুকুরিয়া বিটের পিপলির জঙ্গল থেকে এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে চাঁদাবিলা ও গিরা হয়ে এদিন ভোরে শুশনি গ্রামের আনাজ খেতে ঢুকে পড়েছিল। লাউ ও শশার খেত সাবাড় করে, করলা খেত পায়ে মাড়িয়ে তছনছ করে দেয় হাতিরা। শুশনি গ্রামের আনাজ চাষি টুকেন মাহাতো, মঙ্গল মাহাতো, দিলীপ মাহাতোরা জানালেন, মকর পরবের চাউড়ির দিনে পিঠের চাল গুঁড়ো করার দিন। সকালেই এমন ক্ষতি হওয়ায় কারও মন ভাল নেই। তাঁদের কথায়, ‘‘ধানের মরসুমে হাতিরা ধান খেয়েছে। এখন আনাজ চাষেরও ক্ষতি করছে হাতিরা।’’
এ দিন বন সুরক্ষা কমিটি ও গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে হাতির দলটি শিরশি ও বাঘুয়াদামের জঙ্গলে ভাগাভাগি হয়ে ঢুকে পড়ে। সন্ধ্যে হতেই দলটি লোকালয় থেকে বেরিয়ে পড়ায় বনকর্মী ও হুলাপার্টির দল হাতিদের লোকালয়ে আসার পথে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে, এলাকার জঙ্গলে দাঁতালের দল থাকায় উৎসবের আবহে হাতির দল লোকালয়ে ঢুকলে কী হবে ভেবেই দিশেহারা এলাকাবাসী। চিন্তিত বন দফতরও। এমন পরিস্থিতিতে শুশনির পাশাপাশি, পার্শ্ববর্তী কুমরি ও বাঁকশোল গ্রামের বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য ও গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
কয়েক মাস আগে ঝাড়গ্রামের সিমলি গ্রামের যুগল মাহাতো, যামিনী মাহাতো, জারুলিয়া গ্রামের তপন মাহাতো, নারায়ণ মাহাতোর পুরো ধান চাষটাই শেষ করে দিয়েছিল হাতির দল। তবুও প্রথা মেনে মকরে সাধ্যমতো টুসু জাগরণ ও পিঠেপুলির আয়োজন করেছেন যুগল, তপন, নারায়ণরা। ফের হাতিরা এলে কী হবে? আগুইবনি পঞ্চায়েতের সদস্য সুষমা মাহাতো বলেন, ‘‘পরবের দিনে আনন্দের সঙ্গে উৎকন্ঠায় থাকতে হচ্ছে সবাইকেই।’’
ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হলেইচ্চি বলেন, ‘‘বনকর্মী ও হুলাপার্টি সতর্ক রয়েছে। গ্রামবাসীকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে হাতি খেদানোর নামে অযথা যাতে হাতিকে কেউ উত্ত্যক্ত না করেন সে ব্যাপারেও অনুরোধ করা হচ্ছে।’’