প্রতীকী চিত্র।
বৈদ্যুতিক আলোর রোশনাইয়ের ভিড়ে জনপ্রিয়তা কমেছে দিওয়ালি পুতুলের। উৎসবের মরসুমেও চাহিদা কম, তাই বংশ পরম্পরায় চলে আসা পুতুল বানানোর পেশা ছাড়ছেন কেশিয়াড়ির পরিবারগুলি। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক কালে দিওয়ালি পুতুলের চাহিদা তো কমেইছিল, পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি তাঁদের পেশা পরিবর্তনের পথকে আরও প্রশস্ত করেছে।
জেলায় মেদিনীপুর, খড়্গপুরের পর কেশিয়াড়িতেও বেশ কয়েকটি পরিবার দিওয়ালি পুতুল-সহ নানা রকমারি মাটির পুতুল তৈরি করেন। এটাই তাঁদের বংশ-পেশা। কিন্তু আধুনিক বৈদ্যুতিক আলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারায় চাহিদা কমছে এই ধরনের পুতুলের। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পরিবারগুলি। কেশিয়াড়ি সর্বমঙ্গলা মন্দিরের কাছেই কুমোরদের বাস। বছরের বিভিন্ন সময় মাটির জিনিসপত্র তৈরি করলেও কালীপুজোয় মাটির প্রদীপ এবং ঐতিহ্যবাহী দিওয়ালি পুতুল তৈরির প্রস্তুতি চলে। কেশিয়াড়ির স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে, সে সবের চালান যেত অন্যত্রও। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সে সব এখন অতীত।
এলাকার বাসিন্দা রামচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি খুব খারাপ সময়ে দাঁড় করিয়েছে আমাদের। বাজার, হাট বন্ধ হওয়ায় জিনিসপত্র তৈরির সাহস দেখাতে পারিনি। বিক্রি তো পরের কথা। বর্তমানে কিছু জিনিস তৈরি করে বসে আছি। বাজার একেবারেই নেই।’’ একই বক্তব্য গয়াপ্রসাদ, সনাতন, মনোরমা বেরাদের। নানা রঙের মাটির পুতুল তৈরি করে এক সময় লাভের মুখ দেখতেন মনোরমা এবং তাঁর ছেলে সনাতন। এ বারে আর পুতুল বানাচ্ছেন না কেন? সনাতন বলেন, ‘‘বাজার বন্ধ। কোথাও গিয়ে পুতুল বিক্রি করব, সে সুযোগও নেই। এই শিল্প থেকে আমাদের আর কিছু জুটছে না।’’ এক সময় বেশ জনপ্রিয়তা ছিল মনোরমা ও ছেলে সনাতনের তৈরি পুতুলের। বাড়িতে সাজিয়ে রাখার মতো ময়ূর, পাখি, সাপ, পালকি-সহ বিভিন্ন আকারের পুতুল বানাতেন তাঁরা। এই প্রসঙ্গে মনোরমা বলছিলেন, ‘‘পুতুল যে বানাব, চাহিদা কোথায়?’’
তবে দীপাবলির কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু দিওয়ালি পুতুল বানিয়েছেন আলপনা বেরা। পুতুল গড়ার পর আপাতত তা শুকিয়ে পোড়ানোর পর রং দেওয়ার কাজ চালাচ্ছেন তিনি। আশা যদি কিছু বিক্রি হয়। যদি লাভের দেখা মেলে, সেই আশায় হাত চালাচ্ছেন তিনি।
তাঁর কথায়, ‘‘কোনও মতে কাজটি ধরে রাখার চেষ্টা চলেছি।’’ মাটির দিওয়ালি পুতুল বাদ দিয়ে মাটির প্রদীপ, হাতি, ঘোড়া, হাঁড়ি, সরা, ভাঁড়, ধুনুচিও বানান তাঁরা। মন্দার পরিস্থিতিতে আপাতত প্রশাসনের সহযোগিতার আশায় দিন গুনছে কেশিয়াড়ির কুমোরপাড়া।