Netai

এলেন না সায়নী-দেবাংশু, অস্বস্তি তৃণমূলের অন্দরেও

নেতাই গ্রামে ঢোকার মুখে সায়নীকে দেখার জন্য অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মমতা সেন এক মহিলা। মমতার আক্ষেপ, মিছিলের প্রথমে সায়নীকে দেখা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নেতাই শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৭
Share:

সভায় ভিড়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নেতাইয়ে শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা সভায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের থাকার কথা ছিল না। তবে রাজ্য স্তরের দু’জনের নাম ঘোষণা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরাও এলেন না। যা নিয়ে কার্যত অস্বস্তিতে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। তবে জেলা তৃণমূলের অবশ্য দাবি, শুভেন্দুর পাল্টা সভায় জঙ্গলমহলের নেতৃত্বই যথেষ্ট। এদিন সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এদিন তৃণমূলের পাল্টা সভায় যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী তথা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ ও দলের অন্যতম মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্যের আসার কথা ছিল। সেই মতো প্রচারও চলেছিল। সভায় ভিড়ও হয়েছিল ভালই। কিন্তু যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের অনেকেই হতাশ। সভার আয়োজকদের কেউ কেউ আড়ালে বলছেন, সায়নী যে আসবেন না তা তাঁরাও জানতেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালগড় ব্লকের একটি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি বলেন, ‘‘আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেছি সায়নী ঘোষ আসবেন। মানুষ বাসে চেপে এসেছেন। কিন্তু তিনি এলেন না। পরের বার মানুষ আর কথা শুনবে তো!’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু অবশ্য বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন জঙ্গলমহলের নেতা-নেত্রীরাই শুভেন্দুর যথেষ্ট জবাব দেবেন। সায়নী ঘোষের আসার কথা ছিল। দল তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাওয়ার দরকার নেই। জেলার নেতা-নেত্রীরাই যথেষ্ট। ’’

এদিন নেতাই গ্রামে ঢোকার মুখে সায়নীকে দেখার জন্য অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মমতা সেন এক মহিলা। মমতার আক্ষেপ, মিছিলের প্রথমে সায়নীকে দেখা যায়নি। অনেকে বলল শেষে গাড়িতে আসবে। কিন্তু সেটাও হল না। বেলপাহাড়ি ব্লকের হাড়দা পঞ্চায়েতের ভদ্রাপাল গ্রাম থেকে সভায় এসেছিলেন মাধবী পতি নামে এক বৃদ্ধা। সঙ্গে ছিল ছোট নাতনি অনিমা পতি। মাধবীও বললেন, ‘‘সায়নীকে দেখার জন্য কষ্ট করে এলাম। নাতনি দেখবে বলেছিল। কিন্তু আসাটাই বেকার হয়ে গেল।’’ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা অপরুপা পাল ও উজ্জলা পালদের কথায়, ‘‘সায়নী ঘোষ আসবে বলেছিল। সেজন্য দাঁড়িয়ে মিছিল দেখছিলাম। কিন্তু এল কই!’’

Advertisement

এদিন বিকেল তিনটে নাগাদ লালগড় চক থেকে মিছিল শুরু হয় তৃণমূলের। নেতৃত্বে ছিলেন বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্ম, বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা-সহ জেলা নেতা-নেত্রীরা। মিছিল নেতাই গ্রামে আসার পরে শহিদবেদিতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে দেন শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি নন্তু অধিকারি। তারপর সেখানে মালা দেন বিরবাহা, দুলাল। গত সোমবার নেতাই গ্রামে সভা করতে এসেছিলেন শুভেন্দু। তিনিও শহিদ বেদিতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘শুদ্ধ’ করেছিলেন। এদিন বিরবাহা, দেবনাথ-সহ জেলার নেতারা আগাগোড়া শুভেন্দুকে আক্রমণ করেন।

দেবনাথ দাবি করেন, ‘‘শুভেন্দু জঙ্গলমহলে যেখানে সভা করবেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিগুণ লোক নিয়ে পাল্টা সভা করব।’’ বিরবাহা বলেন, ‘‘যদি জানতাম শুভেন্দু আসবে তাহলে রাস্তায় বুক চিতিয়ে একা লড়াই করতাম। পদ নিয়ে ভাবি না। মাঠে-ঘাটে লড়াই করা মানুষ আমি।’’ এবার নেতাই ঢুকলে শুভেন্দুকে ‘ঘাড় ধাক্কা’ দিয়ে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন বিরবাহা। তিনি আরও বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী এলে প্রশ্ন করবেন, এই এলাকার অনেক নিরীহ মানুষকে মাওবাদী কেস এসপি আর আপনি (শুভেন্দু) মিলে দিয়েছিলেন। এখনও মানুষগুলোকে দিনের পর দিন কোর্টে যেতে হয়। তৎকালীন এসপি ভারতী ঘোষ এখন বিজেপির নেত্রী হয়ে গিয়েছেন। সবাই ভুলে গেলেও বিরবাহা ভুলে যায়নি।’’

তৃণমূলের এই সভাকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘শুভেন্দুদার অনুষ্ঠানে মানুষজন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসেছিলেন। আর তৃণমূল সায়নী ঘোষ আসবেন বলে বিভিন্ন ব্লক থেকে লোকজনকে বাসে চাপিয়ে ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল। ভাঁওতা দেওয়াই যে এদের কাজ তা মানুষ বুঝেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement