ভেঙে পড়া ঘরের সামনে শুভ্রকান্তি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সে জন্য সরাসরি বিডিও এবং পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে আবেদনের জন্য স্থানীয় সংবাদপত্রগুলিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন এলাকার সাংসদ শিশির অধিকারী। সেই মতো পরপর দুবার বিডিও অফিসে আবেদনও জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও কোনও সরকারি সাহায্য জোটেনি। আমপানে ভেঙে গিয়েছে মাটির ঘর। ফলে খোলা আকাশের নীচেই দিন কাটছে কাঁথি-৩ ব্লকের দুরমুঠ পঞ্চায়েতের বাঘাদাড়ি গ্রামের প্রতিবন্ধী যুবক শুভ্রকান্তি পন্ডার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনভর খোলা আকাশের নীচেই মা-বাবা ও দাদার সঙ্গে দিন কাটে ওই যুবকের। রাতে বৃষ্টি হলে ভরসা ভেঙে যাওয়া ঘরের এক চলতে বারান্দা। দু’পায়ে ভর রেখে ঠিকমত হাঁটা দূরের কথা, দাঁড়াতেই পারেন না শুভ্রকান্তি । স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারেন না। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ মে ঘূর্ণিঝড়ে পুরনো মাটির বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। তিন দিকের বারান্দার টালির ছাউনিও ভেঙে পড়ে। শুধু এক দিকের বারান্দার সামান্য ছাউনিটুকুই রাতের বেলা সম্বল গোটা পরিবারের। কারণ সারাদিন কাটে খোলা আকাশের নীচেই। বাবা প্রদীপ কান্তি পন্ডা পঞ্চায়েত দফতরের কর্মী হিসেবে কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। পেনশনের টাকায় টেনেটুনে চলে চারজনের সংসার। মা শম্পা পন্ডা বলেন, ‘‘ছেলেকে সব সময় হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু ঘর ভেঙে যাওয়ায় সারা দিন গাছতলাতেই কাটে। রাতে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে বারান্দায় সবাই ঠাঁই নিই।’’
প্রদীপবাবুর অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড়ের পরে বিডিও অফিসে গিয়ে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছি। মঙ্গলবার ফের বড় ছেলেকে নিয়ে বিডিও অফিসে গিয়ে আবেদেন জানিয়েছি। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ তবে এ দিন বিডিও অফিস থেকে ফেরার পর স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে তাঁদের একটা ত্রিপল দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রতিবন্ধী যুবক-সহ ওই পরিবারের এমন দুর্দশা নিয়ে শাসক দলকে কটাক্ষ করেছে সিপিএম। স্থানীয় সিপিএম নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন, ‘‘দাবি, ঘূর্ণিঝড়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা আর্থিক সহায়তা থেকে যে বঞ্চিত তার বড় দৃষ্টান্ত এই পরিবার। প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও এভাবে বঞ্চিত করার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। ওই পরিবার যাতে আগামী দিনে সরকারি সহায়তা পায় তার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাব।’’
যদিও কাঁথি-৩ এর বিডিও নেহাল আহমেদ বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী ওই যুবকের পরিবারের কাছ থেকে বাড়ির ক্ষতি হওয়ার আবেদনপত্র পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতকে তদন্ত করে ওই পরিবার যাতে আর্থিক সহায়তা পান তার জন্য পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।’’