সত্যাডিহি গ্রামের ঢাকিরা। নিজস্ব চিত্র Ranjan Pal
আর জি করে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের পরে উত্তাল রাজ্য। সেই আবহেই চলে এসেছে পুজোর গন্ধ। টালমাটাল এই সময়ে পুজোয় কতটা আনন্দ করতে পারবেন মানুষ— সেই নিয়ে প্রশ্ন ঘুরছে। উৎসবে ফেরার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। চিন্তায় রয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারাও। তবে এই আবহেও পুজোর বায়না ভালই পেয়েছেন ঢাকিরা। তবে শেষ পর্যন্ত তা থাকবে তো— সেই আশঙ্কা থাকছেই।
ইতিমধ্যেই আর জি কর কাণ্ডের পরে কলকাতার একটি পুজো কমিটি ঢাক বাজানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে খবর। এই সিদ্ধান্ত যদি প্রবণতা হয়ে যায় তাহলে কী হবে! সেই নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ঝাড়গ্রাম ব্লকের সত্যাডিহি এলাকার ঢাকিরা। বংশ পরম্পরায় সেখানে থাকেন তাঁরা। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৪০টি ঢাকি পরিবার রয়েছে। তাঁরা সারা বছর অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও অপেক্ষা করেন দুর্গাপুজোর জন্য। ঝাড়গ্রাম জেলার পাশাপাশি ভিন্ জেলা, ভিন্ রাজ্য থেকেও ঢাক বাজানোর ডাক আসে।
বছরের বাকি সময়ে ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ চাষবাস করে সংসার চালান। অনেকে দিনমজুরিও করেন। ঝাড়গ্রামে গ্রামীণ এলাকার দুর্গাপুজোয় তাঁরা খুব বেশি বায়না পান না। ফলে যেতে হয় বাইরে। করোনা সংক্রমণের সময়ে ওই ঢাকিদের কপাল পুড়েছিল। এমনিতে দুর্গাপুজোর সময়ে এখানকার ঢাকিদের জন প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হয়। করোনার সময়ে তা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। ভিন্ জেলার পাশাপাশি ভিন্ রাজ্য থেকেও বায়না আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ওই এলাকার প্রায় সব ঢাকি বায়না পেয়েছেন এই বার।
হাতে আর বেশি সময় নেই। এখন ঢাকের মেরামত করা চলছে সেখানে। সেখানকার ঢাকি সুভাষ মিদ্যা, কালীপদ মিদ্যা, বংশী মিদ্যারা বলছেন, ‘‘বংশ পরম্পরায় ঢাক বাজানো চলে আসছে। পুজোর দিনগুলির জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি। এই সময় যে কটা টাকা আয় হয়, তা দিয়েই নতুন পোশাক কেনা হয়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পুজোর বায়নাও ভাল হয়েছে।’’
তবু আশঙ্কা যাচ্ছে না।
সত্যাডিহির ঢাকি নির্মল মিদ্যা, শম্ভু রাউতদের কথায়, ‘‘এখন আমাদের এখানে সবাই প্রতিদিন ঢাকের যত্ন করছেন বটে কিন্তু আর জি কর কাণ্ডের প্রভাব উৎসবে পড়ে কি না তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কাটছে না। ভয় তো হচ্ছেই। তবে আশা করছি ভাল কিছুই হবে।’’