ছবি: সংগৃহীত।
প্রাণে বাঁচতে চাইলে দ্রুত আত্মসমর্পণ করুন। মায়ানমারের জুন্টা সেনার কাছে এই আর্জি জানালেন বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে ধৃত ব্রিগেডিয়ার কিয়াও কিয়াও থান। চলতি সপ্তাহেই জুন্টাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং ইয়ঙ্গনের হামাউবি টাউনশিপে মহিলা অফিসার ক্যাডেটদের ‘পাসিং আউট’ অনুষ্ঠানে কোনও অবস্থাতেই বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেনাকে। তার পরেই এল ধৃত সেনাকর্তার এই বার্তা।
ব্রিগেডিয়ার কিয়াও রাখাইন প্রদেশের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়েস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ছিলেন। গত সপ্তাহে আরাকান আর্মির মংডু দখলের সময় যুদ্ধবন্দি হয়েছিলেন তিনি। সে দেশের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আউং সান সু চির সমর্থক স্বঘোষিত ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইরাওয়াদি’ শনিবার ধৃত সেনাকর্তার একটি ভিডিয়ো বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতেই রয়েছে ওই আবেদন।
মায়ানমারের গত এক বছরের গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে চলতি মাসে। দু’সপ্তাহ আগেই বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর বৃহত্তম শরিক আরাকান আর্মি দখল করেছিল বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশ। এর পরে রবিবার রাতে মণিপুর লাগোয়া চিন প্রদেশের দখল নিয়েছে মায়ানমারের বিদ্রোহী জোটের আর এক শরিক! এই অংশেই মায়ানমারের কুকি জনগোষ্ঠীর (যাঁরা সে দেশে কুকি-চিন নামে পরিচিত) বসবাস। ফলে নতুন করে সীমান্ত পেরিয়ে মণিপুরে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জুন্টাবিরোধী নতুন জোট ‘চিন ব্রাদারহুড’-এর শরিক ‘ইয়াও ডিফেন্স ফোর্স’, সাগাইন অঞ্চলে সক্রিয় ‘ইয়াও আর্মি’ এবং ‘মনিওয়া পিপল্স ডিফেন্স ফোর্স’ চিন প্রদেশ দখলের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে ‘দ্য ইরাওয়াদি’র দাবি।
এর পরে বুধবার আরাকান আর্মি এবং তাদের সহযোগী কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ইরাবতী নদীর অববাহিকায় অবস্থিত থান্ডওয়ে নৌঘাঁটি এবং অদূরের গাওয়া শহর দখলে নিয়েছে। গত ১৩ মাসের গৃহযুদ্ধে এই প্রথম ইরাবতী অববাহিকায় অনুপ্রবেশ করল বিদ্রোহীরা। গাওয়ার অদূরে সৈকত শহর এনগাপালিতে জুন্টা সেনার ‘ওয়েস্টার্ন কমান্ড’-এর সদর দফতরও বিনা যুদ্ধে বিদ্রোহী বাহিনীর কব্জায় চলে গিয়েছে বলে সূচি সমর্থক গণতন্ত্রপন্থীদের দাবি। গাওয়া থেকেই পথ গিয়েছে রাজধানী নেপিডো এবং বাণিজ্য রাজধানী ইয়ঙ্গনের দিকে, এর ফলে জুন্টা সরকার অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়তে চলেছে বলে সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।
এই আবহে জুন্টার উপর চাপ বাড়িয়েছে সাদা পতাকা নিয়ে সেনাদের আত্মসমর্পণের বিভিন্ন ভিডিয়ো ফুটেজ। ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন সমাজমাধ্যম ও ওয়েবসাইটে তা প্রচার হতে থাকায় জুন্টাসেনার মনোবল কমতে শুরু করেছে বলে মনে করা হয়েছে। বিদ্রোহীদের মদতপুষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠী ‘দ্য ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি’ (ইউডব্লিউএসপি) ইতিমধ্যেই কয়েকটি ‘মুক্ত’ এলাকায় সমান্তরাল সরকার চালানো শুরু করে দিয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করেছিল মায়ানমার সেনা। শুরু হয়েছিল সামরিক জুন্টার শাসন। ক্ষমতা দখলের চতুর্থ বর্ষপূর্তির বাকি মাত্র মাস দেড়েক। কিন্তু বিদ্রোহী বাহিনীর অগ্রগতির মুখে তত দিন জুন্টার বাহিনী টিকতে পারবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।