দেহ নিয়ে কলকাতা রওনা। — নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্ট বুধবার নির্দেশ দিয়েছিল, ময়নার নিহত বিজেপি কর্মী বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়ার দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করার। সেই মোতাবেক বৃহস্পতিবার তমলুক হাসপাতালের মর্গ থেকে কলকাতার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হল ওই বিজেপি কর্মীর নিথর দেহ। সঙ্গে ছিল পুলিশি প্রহরা। এ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসি করার অভিযোগ করেছেন বিজয়কৃষ্ণের ছেলে। যদিও বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নয় পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশ।
বুধবার হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, বিজয়কৃষ্ণের দেহ দ্বিতীয় বার ময়না তদন্ত করতে হবে। তাঁর দেহ কলকাতার কমান্ড হাসপাতালে এনে ময়নাতদন্ত করা হবে। এ নিয়ে বিশেষ দল গঠন করে ময়নাতদন্ত করবে কমান্ড হাসপাতাল। রাজ্যের ২ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞও উপস্থিত থাকতে পারবেন ওই পর্বে। নিহতের পরিবার চাইলে ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন বলেও জানায় হাই কোর্ট। আরও বলা হয়, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবার এবং ময়না থানাকে দেবে কমান্ড হাসপাতাল। বিচারপতি নির্দেশ দেন, তমলুক হাসপাতালে নিহতের পরিবারের সদস্যদের দেহ দেখিয়ে অবিলম্বে রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তায় দেহ কলকাতায় নিয়ে যেতে হবে। ময়নাতদন্তের পর আবার দেহ ফেরত নিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। আরও বলা হয়, চার সপ্তাহের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় থাকবে নিহত বিজয়কৃষ্ণের পরিবার। আগামী সোমবারের মধ্যে রাজ্যকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দেয় উচ্চ আদালত। সেই মোতাবেক বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ তমলুক মর্গ থেকে বিজয়কৃষ্ণের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার উদ্দেশে। ছিলেন নিহতের ছিলেনে প্রজেনজিৎ ভুঁইয়া।
বাবার দেহ কলকাতা পাঠানো নিয়ে পুলিশি গড়িমসি করার অভিযোগ করেছেন প্রসেনজিৎ। তাঁর দাবি, তিনি সকাল ৮টা নাগাদ তমলুক হাসপাতালে পৌঁছলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘সোমবার আমাদের কাছে গোপন করে বাবার দেহ ঘুরপথে তমলুক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এর পর পরিবারের মতামত না নিয়েই মঙ্গলবার তমলুক হাসপাতালে দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এর ফলে অনেক তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়ে গিয়েছে বলে আমাদের আশঙ্কা। তমলুক হাসপাতালের মর্গে এসির সমস্যা রয়েছে বলে শুনছি। এতটা সময় সেখানে থাকায় দেহ বিকৃত হয়ে যেতে পারে বলেও আমাদের আশঙ্কা।’’ প্রসেনজিতের অভিযোগ নিয়ে অবশ্য কোনও উত্তর দিতে চায়নি পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশ।
ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দার অভিযোগ, ‘‘আদালত নির্দেশ দিলেও দেহ ছাড়তে অযথা গড়িমসি করছে পুলিশ। আমাদের আশা, দেহ কলকাতায় ময়নাতদন্ত হলেই সত্যিটা বেরিয়ে আসবে। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়েও তদন্তের দাবি জানাচ্ছি আমরা।’’
এ নিয়ে যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি পার্থসারথি মাইতি বলেন, ‘‘ময়নার ঘটনায় তৃণমূলকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। এখানে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল চরমে। শুভেন্দু অধিকারী বনাম মাদার বিজেপির আলাদা গ্রুপ রয়েছে। এখানে নিজের জায়গা দখলে রাখতে শুভেন্দুবাবু অত্যন্ত ঘৃণ্য রাজনীতি করছেন। আমরা রাজনৈতিক ভাবে গোটা পরিস্থিতির মোকাবিলা করব। যারা ঘটনায় দোষী তারা অবশ্যই শাস্তি পাবে।’’