আমপানে ভেঙেছে কিচিরমিচিরের হাড়ি। নিজস্ব চিত্র
আমপানের ঝড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে বন দফতরের ‘কিচিরমিচির’ প্রকল্প। ঝড়ে ভেঙেছে পার্কের গাছ। ভেঙেছে গাছে বাঁধা হাঁড়িও। ফলে পাখির ডাকে বিনোদন পার্ক মুখরিত হওয়ার সম্ভাবনা আশা জাগিয়েও মুখ থুবড়ে পড়ল বলে মনে করছেন বনকর্মীরা।
কয়েকমাস আগে বন দফতরের নগর ও বিনোদন শাখার পক্ষ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চারটি বিনোদন পার্কে ‘কিচিরমিচির’ প্রকল্প চালু করা হয়। প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল পার্কে হরেক রকম পাখিকে টেনে আনা। চন্দ্রকোনা রোডের পরিমল কানন, মেদিনীপুর শহরের সুকুমার সেনগুপ্ত উদ্যান, ক্ষুদিরাম পার্ক-সহ চারটি বড় বিনোদন পার্ককে বেছে নেওয়া হয়েছিল এই প্রকল্পের জন্য। সে জন্য পার্কের বড় গাছগুলিতে শতাধিক মাটির হাঁড়িও বাঁধা হয়েছিল। বন দফতরের নগর ও বিনোদন শাখার লক্ষ্য ছিল চড়ুই, শালিক প্রভৃতি হারিয়ে যাওয়া পাখিদের আশ্রয় দিয়ে তাদের কলতান ফিরিয়ে আনা।
পাখিদের সঙ্গে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পরিচয় বাড়াতে প্রতিটি হাঁড়ির দেখভালের দায়িত্ব একেক জন পড়ুয়াকে দেওয়া হয়েছিল। গাছে বাঁধা হাঁড়িতে পাখিদের আনাগোনাও বাড়ছিল। কিন্তু আমপানের জেরে কিচিরমিচির প্রকল্প। লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই বন দফতরের বিনোদন পার্কগুলি বন্ধ। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল অনেক হাঁড়ি। বন দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘এমনিতে নিরিবিলি পার্কে পাখির বিচরণ বাড়লেও, কিচিরমিচির প্রকল্পের লক্ষ্য বাধা পায় দীর্ঘদিন পার্ক বন্ধ থাকায়। সেই সঙ্গে আমপানের ঝড়ে ভেঙে পড়ে গাছে বাঁধা হাঁড়িগুলি।’’ চন্দ্রকোনা রোডের পরিমল কাননে বিভিন্ন গাছে নামকরণ করে ৫০টি হাঁড়ি বাঁধা হয়েছিল। পার্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশিরভাগই হাঁড়িই ভেঙে পড়েছে আমপানে। মাটিতে পড়েছে হাঁড়িতে থাকা পাখির ডিমও।
অন্য দিকে, মেদিনীপুর শহরের তিনটি বিনোদন পার্কের অবস্থা প্রায় একই। বন দফতরের নগর ও বিনোদন শাখার মেদিনীপুর রেঞ্জের আধিকারিক নিত্যানন্দ রায়কর্মকার বলেন, ‘‘আমপানের ঝড়ে কিচিরমিচির প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হয়েছে। দীর্ঘদিন পার্ক বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের কিছুটা অভাব ছিলই, সেই সঙ্গে আমপানের ঝড়ে পার্কগুলিতে গাছে বাঁধা অনেক হাঁড়িই ভেঙে পড়েছে।’’ এই শাখার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে এখনই কিচিরমিচির প্রকল্প নিয়ে কোনও পরিকল্পনা করা হচ্ছে না। আগে পার্ক খুলুক, সব স্বাভাবিক হোক, তারপর বছরের শেষের দিকে আরও একবার চেষ্টা করে দেখা হবে।’’