পড়ে রয়েছে কাঁকড়া। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাসে ব্যতিবস্ত চিন। আর তার জেরে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে এ রাজ্যে। করোনাভাইরাসের জেরে ইতিমধ্যেই মার খেয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের পরচুলা ব্যবসা। এ বার মন্দা দেখা দিয়েছে সামুদ্রিক মাছ ব্যবসাতেও। জেলা থেকে চিনে রফতনি করা হত কাঁকড়া। করোনাভাইরাসের কারণে এ বার টানা দু’সপ্তাহের বেশি রফতানি বন্ধ হয়ে থাকায় মাথায় হাত পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী মৎস্যজীবী এবং কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের। প্রায় এক দশক আগে এখানে বাগদা চাষে ভাইরাস সংক্রমণের জেরে বাতিল হয়েছিল বিদেশে রফতানি। প্রচুর টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। দেনার দায়ে কয়েকজন বাগদা চাষি আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটে। ফের সেই আতঙ্ক নিয়ে প্রহর গুনছেন উপকূল এলাকার মৎস্যজীবীরা।
মৎস্যজীবীরা জানান, পূর্ব মেদিনীপুরে ৭২.৫ কিলোমিটার সমুদ্র উপকূল এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে খেজুরি, নন্দীগ্রাম এবং নয়াচরে কাঁকড়া চাষ হয়। এই পেশায় যুক্ত রয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে কাঁকড়া বিদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। খেজুরির বাসিন্দা নভেন্দু দাস বলেন, ‘‘এতদিন মাদি কাঁকড়া ১৮০০-১৯৫০ টাকা কেজি দরে এবং পুরুষ কাঁকড়া ১৪০০ টাকা কেজি দরে সর্বাধিক বিক্রি হয়েছে। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে আর কাঁকড়া নিতে চাইছেন না রফতানিকারীরা। ফলে দুরকম কাঁকড়ার দামই অর্ধেকেরও নীচে নেমে গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত বাঘাযতীন এলাকার এক রফতানিকারী সুজিত রায় বলেন, ‘‘জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিনে ‘স্প্রিং ফেস্টিভাল’ (বসন্ত উৎসব) চলে। প্রতি বছর ওই সময় কাঁকড়া এবং সামুদ্রিক মাছের চাহিদাও থাকে প্রচুর। কিন্তু এবছর করোনাভাইরাস এর জেরে কোনও কিছুই নিতে চাইছে না চিনের ব্যবসায়ীরা। তাই আমরাও এখানকার ব্যবসায়ীদের থেকে কাঁকড়া এবং সামুদ্রিক মাছ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ রফতানিকারীদের এমন সিদ্ধান্তে কপালে ভাঁজ পড়েছে উপকূল এলাকার জনসংখ্যার প্রায় কুড়ি শতাংশ মানুষের কপালে। মাছ এবং কাঁকড়ার উপরেই যাঁদের জীবিকা নির্ভর করে। শুধু কাকঁড়া নয়, বেগতিক পরিস্থিতি পমফ্রেট, পাতা মাছ, স্কুইড ও কাটেল মাছ কারবারীদেরও।
দিঘা- শঙ্করপুর ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের ব্যবসাও। আমাদের এখান থেকে মূলত চিংড়ি, কাঁকড়া, পমফ্রেট, পাতা মাছ, স্কুইড ও কাটেল প্রজাতির মাছ সরবরাহ হত চিনে। যা বর্তমানে বন্ধ। ফলে দাম কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। এভাবে বেশিদিন রফতানি বন্ধ থাকলে দাম আরও নামার আশঙ্কা রয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে একই ভাবে ভাইরাস আতঙ্কের জেরে চিন, জাপান, ব্যাঙ্কক এবং তাইল্যান্ডে রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভেড়ির চিংড়ি। সে বার চিংড়ির দাম না পাওয়ায় আর্থিক লোকসান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন পাঁচজন মৎস্যচাষি। আট বছর বাদে করোনাভাইরাস আতঙ্কে গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন চিনের। তার জেরে চিংড়ি এবং কাঁকড়া-সহ অন্য সামুদ্রিক মাছ নিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় অতীতের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন মৎস্যজীবীরা।
যদিও এ বিষয়ে সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগ বলেন, ‘‘চিনে রফতানি বন্ধ থাকায় কাঁকড়া এবং সামুদ্রিক মাছের দাম কিছুটা কমেছে ঠিক। তবে এখনই এতটা বিপদের পরিস্থিতি দেখা দেয়নি। আমরা প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।’’
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে কবে ফের রফতানি শুরু হবে, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে মৎস্যজীবীরা।