বাঁশগোড়া বাজারে সিপিএমের সভা। —নিজস্ব চিত্র
অনুমতি নেওয়া হয়েছিল পথসভার। কিন্তু মানুষের ভিড় আর উৎসাহ দেখে সেই পথসভাকেই জনসভা বলে দাবি করল সিপিএম।
গত লোকসভা ভোটের মুখে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পার্টি অফিস খুলেছিল। ইদানীং মিছিল কিংবা জনসংযোগ কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছিল। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পরে একদা ‘লাল দুর্গ’ হিসাবে পরিচিত খেজুরিতে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ পথসভার আয়োজন করেছিল সিপিএম। বর্তমানে তৃণমূলের এলাকা হওয়ায় এবং শাসক দলের ‘কোপে’ পড়ার ভয় থাকায় সভায় ভিড় কেমন হবে তা নিয়ে সংশয় ছিল সিপিএম নেতৃত্বের। তাই মাত্র শ’দেড়েক চেয়ারের ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁরা। মাইকের সংখ্যাও ছিল হাতোগোনা। কিন্তু খেজুরি-১ ব্লকের বাঁশগোড়া বাজারে বুধবার সন্ধ্যায় দলের ওই পথসভা মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ল। যা দেখে তাঁদের কর্মসূচি ‘জনসভা’ বলে দাবি করলেন উচ্ছ্বসিত জেলা সিপিএম নেতৃত্ব।
চণ্ডীপুরে ১৮ নভেম্বর ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকারের জনসভা রয়েছে। ওই সভার সমর্থনে ওই দিন রাতে খেজুরিতে প্রচার সভা ডেকেছিলেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি হিমাংশু দাস, সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক পরিতোষ পট্টনায়ক প্রমুখ ছিলেন। সিপিএম নেতা হিমাংশু দাসের দাবি, ‘‘পুলিশকে জানিয়ে এবং স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির অনুমতি নিয়ে পথসভার আয়োজন হয়েছিল। শ’দেড়েক লোকের বসার জন্য চেয়ার রাখা ছিল। কিন্তু সভা শুরু হওয়ার পর থেকে রাস্তার দু’পাশ জুড়ে ভিড় জমতে শুরু করে। আসলে এটা হচ্ছে কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’’
গত লোকসভা ভোটে একদা লাল দুর্গ বলে পরিচিত খেজুরিতে যেখানে তারা দাঁত ফোটাতেই পারেনি। গত দশ বছরে যেখানে তাদের কোনও কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি। বিধানসভা ভোটের বছর দেড়েক আগে সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এমন ‘সাড়া’ নিয়ে জেলা সিপিএম নেতৃত্ব আশা দেখছেন। তাঁদের দাবি, রাজ্যে তৃণমূল এবং কেন্দ্রে বিজেপি কী করছে তা এ রাজ্যের মানুষ ভালই টের পাচ্ছেন। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কোনও কিছুর প্রতিবাদ করলে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাঁচার জন্য তাই মানুষ ফের বামেদের উপরে ভরসা করছেন। জেলা সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, সভায় হয়তো আরও মানুষ আসতেন। কিন্তু এলে শাসক দলের রোষানলে পড়তে হবে। তাই ভয়ে আসেননি।
স্থানীয় এক সিপিএম সমর্থকের দাবি, ‘‘বুধবার রাতে দলীয় সভার শেষে বাড়ি ফেরার পর থেকে শাসক দলের লোকেরা দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।’’ যদিও সিপিএমের এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘লোকসভা ভোটের পর থেকে খেজুরি সহ গোটা সাংগঠনিক জেলায় সিপিএম পতাকা লাগানো, সভা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। আসলে তৃণমূল আর সিপিএম মুমূর্ষু লোকের মতো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চাইছে। কিন্তু এটা কেউ মেনে নেবে না।’’ বিজেপির এই বক্তব্যকে নস্যাৎ করে তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য বিমান নায়ক বলেন, ‘‘বিরোধী থাকাটা গণতন্ত্রের পক্ষে ভাল লক্ষণ। তবে মানুষ আমাদের পাশেই রয়েছে।’’