প্রতীকী ছবি।
প্রশাসনিক কোনও নির্দেশিকা আসেনি। নেই কোনও সরকারি উদ্যোগ। এর মধ্যেই ‘আগ বাড়িয়ে’ সরকারি অনুদানের ‘ভুয়ো’ ফর্ম বিলির অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসংগঠিত শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান দেওয়ার ব্যাপারে ঘোষণা করেছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণা কার্যকর করতে এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোনও নির্দেশিকা আসেনি বা আবেদন পত্রের কোনও প্রতিলিপিও পৌঁছয়নি। এই পরিস্থিতিতে তমলুকের বহিচাড় ও কোলাঘাট ব্লকের কয়েকটি এলাকায় এক হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়া হবে বলে অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে ফর্ম বিলি শুরু হয়েছে। যাঁরা এই কাজ করছেন, তাঁরা সিপিএমের কর্মী বলে পরিচিত।
গত তিন-চারদিনে এ রকম অনেক মানুষকে আবেদন পত্রে সই করানো হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ফর্মের ওপরে লেখা, ‘সব ধরনের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার ঘোষিত এক হাজার টাকা অনুদান প্রাপ্তির আবেদন পত্র’। নীচে আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা-সহ একাধিক তথ্য উল্লেখের জায়গা রয়েছে। লকডাউনের মধ্যেও আবেদনপত্র পূরণ করতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কোলাঘাট ব্লকের ভোগপুরের বাসিন্দা উত্তম মণ্ডল একজন অসংগঠিত শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় দুজন সিপিএম কর্মী আমাকে একটি ফর্মে সই করিয়ে সমস্ত আধার, রেশন কার্ডে প্রতিলিপি নিয়ে গিয়েছেন। ওঁরা বলছেন অসংগঠিত শ্রমিকদের সরকার এক হাজার টাকা অনুদান দেবে।’’ উত্তর জিয়াদার শীতল পড়িয়া বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় কয়েকদিন ধরে কেউ কেউ আবেদনপত্র পূরণ করছেন। আমিও আবোজন করতে নথিপত্র জোগাড় করেছি।’’
জেলা শ্রম দফতর অবশ্য সাফ জানাচ্ছে, তারা ফর্ম বিলি করতে বলেনি। তাদের কাছে রাজ্য সরকারের তরফে কোনও নির্দেশিকাও আসেনি। তমলুক শ্রম দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার অনিমেষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ধরনের আবেদনপত্র বিলির কোনও নির্দেশ আমাদের কাছে এসে পৌঁছয়নি। আমাদের দফতর কোনও ফর্ম বিলিও করেনি।’’
তাহলে ফর্ম বিলি করছে কারা! তাদের উদ্যোগে দলের নীচু তলার কর্মীরা যে ফর্ম বিলি করছেন, তা জানাচ্ছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। তিনি বলেন, ‘‘দলের কর্মীরা নথি-তথ্য সংগ্রহ করছেন।’’ কিন্তু কেন? সরকার তো এখনও কোনও আবেদনপত্রই বানায়নি! নিরঞ্জনের জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঘোষণা করেছেন ১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের অনুদানের আবেদন পত্র জমা নেওয়া হবে। আমরা রাজ্য শ্রম দফতর থেকে সেই আবেদনপত্রের মডেল নিয়ে এসে আবেদনপত্র পূরণ করে কাজ এ গিয়ে রাখছি।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য অবশ্য সাফ জানাচ্ছেন, দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে এ রকম আবেদন বিলির নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘সিপিএমের তরফে এরকম কোনও ফর্ম বিলির সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ দলীয় সূত্রের খবর, সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর তরফে বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে এই ধরনের ফর্মের কোনও যোগসূত্র নেই।