আলোচনা: ঝাড়গ্রামে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
সকালে এসেছিল তাঁর পাঠানো ত্রাণ। রাতে এলেন তিনি। মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার রাতে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে গেলেন ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে।
লকডাউনের মধ্যে মন্ত্রী পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রামে ঘুরে যাওয়ায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু মন্ত্রী হয়েও সরকারি বিধিনিষেধ ভেঙেছেন। এই সময়ে এভাবে এক জেলা থেকে আর এক জেলায় ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও উনি সেটাই করেছেন। আসলে এ রাজ্যে সবই বজ্রআঁটুনি ফস্কা গেরো।’’ এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘শুভেন্দুদা দায়িত্বশীল মানুষ ও দায়িত্বশীল মন্ত্রী। উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে উনি মিশনের প্রার্থনাসভাঘরে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এসব প্রশ্ন তোলা অর্থহীন।’’
শাসক দলের অন্দরেও মন্ত্রীর এই সফর ঘিরে শুরু হয়েছে জল্পনা। কারণ, গত বছর নভেম্বরে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেলার সহ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপর থেকে জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে সে ভাবে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি শুভেন্দুকে। রাজনীতিতে কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও জেলার সরকারি ও সামাজিক কর্মসূচিতে এসেছেন শুভেন্দু। কিন্তু দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। শুভেন্দু অনুগামীদের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতবার দায়িত্ব দিয়েছেন, সাফল্য পেয়েছেন তিনি। গত বছর লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রটি তৃণমূলের হাতছাড়া হওয়ার পরে শুভেন্দুকে জেলা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। খড়্গপুর বিধানসভা দখল করে দেখিয়েও দেন শুভেন্দু। কিন্তু ঝাড়গ্রামে শুভেন্দু দলীয় সাংগঠনিক কাজ শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে সহ পর্যবেক্ষক হিসেবে পার্থকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারপর থেকেই কিছুটা যেন নিষ্ক্রিয় শুভেন্দু।
লকডাউন চলায় কিছুদিন আগে পাঁচ হাজার মানুষের জন্য জেলায় ত্রাণ পাঠিয়েছিলেন শুভেন্দু। দলীয়স্তরে ওই ত্রাণ বিলি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ শুভেন্দুর কানে যায়। পরে পার্থও ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলায় ত্রাণ পাঠান। দলীয়ভাবে পার্থর ত্রাণও বিলি হয়। কিন্তু মঙ্গলবার শুভেন্দু তাঁর আপ্ত সহায়ক মারফত জেলার ছ’টি ব্লকে বসবাসকারী ৩ হাজার ৫৪ জন লোধা-শবরদের জন্য খাদ্য ও জরুরি পরিষেবার সামগ্রী পাঠান। নিজের আস্থাভাজন কৃষি দফতরের কর্মী স্নেহাশিস ভকতের মাধ্যমে লোধা-শবরদের ত্রাণসামগ্রী বিলি বণ্টনের দায়িত্ব দেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর নির্দেশ ছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব ত্রাণ বিলি করতে হবে। হয়েছেও তাই। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে আচমকা শুভেন্দু যে কাউকে না জানিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনে চলে আসবেন তা ঘুণাক্ষরেও কেউ জানতে পারেননি। মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশনে আসেন শুভেন্দু অধিকারী। মাথায় হেডক্যাপ, মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান মিশনের সম্পাদক স্বামী শুভকরানন্দ ও এক ব্রহ্মচারীকে। রামকৃষ্ণের ছবিতে ফুল দিয়ে প্রণাম করেন শুভেন্দু। শুভকরানন্দের সঙ্গে ভক্তিসঙ্গীতে গলাও মেলান। প্রসাদী পায়েস আর লাল চা খেয়ে রাত ন’টা নাগাদ ফিরে যান মন্ত্রী। শুভকরানন্দ বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন। প্রার্থনাও করেছেন।’’
জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা বলেন, ‘‘শুভেন্দুদা আগে দলীয়ভাবে ত্রাণ পাঠিয়েছিলেন। সেগুলি বিলি হয়েছে। মঙ্গলবার উনি শবরদের জন্য ব্যক্তিগতস্তরে ত্রাণ বিলি করিয়েছেন। এখন লকডাউন। তাই হয়তো না জানিয়ে এসেছেন। কারণ উনি এলেই মানুষের ভিড় জমে যায়।’’