প্রতী
উৎসবের মরসুমে কমেছে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষা বেশি হলে তবেই সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায়। তাই পরীক্ষার সংখ্যা কমলে সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা কীভাবে বোঝা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
প্রশাসনের অবশ্য দাবি, যথেষ্ট সংখ্যক পরীক্ষা হচ্ছে। তাই উদ্বেগের কিছুই নেই। প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের যুক্তি, সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি বুঝতেই এখন গ্রামে গ্রামে শিবির করে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। পাশাপাশি, হাসপাতালে যেমন পরীক্ষা হত, তেমনটাও হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় এখন করোনা সংক্রমণের হার প্রায় ৮ শতাংশ। সুস্থতার হার প্রায় ৯৫ শতাংশ। মৃত্যুর হার প্রায় ১.৫ শতাংশ। করোনা পরীক্ষার সংখ্যা কমছে কেন? পরীক্ষা করানোর প্রবণতা কমছে বলেই কি? জেলাশাসক রশ্মি কমলের জবাব, ‘‘এখন আমরা কমিউনিটি টেস্টিং বেশি করছি। হাসপাতালেও টেস্টিং হচ্ছে।’’ করোনা মোকাবিলায় গঠিত জেলাস্তরের টাস্কফোর্সের এক সদস্যের দাবি, ‘‘আইসিএমআর-এর গাইডলাইন মেনেই টেস্ট হচ্ছে। যদি কোনও ডাক্তার মনে করেন, কোনও রোগীর টেস্ট করানো উচিত, সেই রোগীর টেস্ট অবশ্যই করানো হচ্ছে।’’
দিন কয়েক আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন গোপালকৃষ্ণ ঢালি। রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ওই স্বাস্থ্য কর্তাও দাবি করেন, ‘‘সরকার যথেষ্ট পরীক্ষা বাড়িয়েছে। যতটুকু সামর্থ্য, সেই অনুযায়ী বাড়াচ্ছে।’’
তবে পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা কমছে। জানা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে এক সময়ে দিনে গড়ে ১,০০০- ১,২০০ করোনা পরীক্ষা হচ্ছিল। কোনও কোনও দিন গড়ে ১,৪০০- ১৫০০ পরীক্ষাও হয়েছে। এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে দিনে গড়ে ৮০০- ৮৫০তে। জেলার এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, ‘‘উৎসবের মরসুমে পরীক্ষার সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। তা অবিলম্বে বাড়ানো উচিত।’’ এই প্রসঙ্গে অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরীক্ষা কম হচ্ছে এবং মৃত্যু বাড়ছে বলে কয়েক দিন আগেই রাজ্য প্রশাসনকে সতর্ক করেছে কেন্দ্র। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের একাংশের অবশ্য যুক্তি, টানা উৎসব চলছে। উৎসব সত্ত্বেও এই সময়ে নমুনা পরীক্ষার নিরিখে সংক্রমণের হার বাড়েনি। এটা স্বস্তিরই। জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এরমধ্যে আরটিপিসিআরে প্রায় ৯১ হাজার, অ্যান্টিজেন প্রায় ৭৮ হাজার, বাকিটা ট্রুন্যাট। জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এখন করোনা-কালের ৪৬ তম সপ্তাহ চলছে। সেই হিসেবে করোনা- কালের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে জেলায় গড়ে প্রায় ৩,৮০০ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩০টি নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র চালু রয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এক সময়ে করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাঁরা আসতেন, তাঁদের সকলেরই পরীক্ষা হলেও এখন যাঁদের উপসর্গ থাকছে, শুধুমাত্র তাঁদেরই পরীক্ষা হচ্ছে। উপসর্গহীনদের পরীক্ষা হচ্ছে না। জেলার এক বিএমওএইচ বলেন, ‘‘সবকিছুরই একটা লক্ষ্যমাত্রা থাকে। কখন কতজনের পরীক্ষা করতে হবে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেন। আমরা সে ভাবেই কাজ করি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’