১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
করোনা সংক্রমণে রাজ্যের অন্যতম রেড জোন পূর্ব মেদিনীপুর। রেড জোন থেকে যখন অরেঞ্জ জোনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যখন করোনা সতর্কতায় আরও বেশি কড়াকড়ি করা হচ্ছে ঠিক তখনই জেলার করোনা মানচিত্রে জুড়ে গেল পাঁশকুড়া শহরের নাম।
কলকাতার এমআর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি পাঁশকুড়া শহরের এক প্রৌঢ়ার শরীরে মিলল করোনা ভাইরাসের সন্ধান। তড়িঘড়ি আক্রান্তের বাড়ির এলাকা সিল করে দেওয়ার পাশাপাশি বাড়ির ন’জন সদস্যকে পাঠানো পাঠানো হল আইসোলেশনে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে খবর, পাঁশকুড়া শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁপাডালি এলাকার ওই প্রৌঢ়া হেপাটাইটিস রোগে ভুগছিলেন। অসুস্থ হয়ে ১১ এপ্রিল ওই প্রৌঢ়া হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় তাঁর মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে কিছুটা সুস্থ হয়ে পাঁশকুড়ায় নিজের বাড়িতে ফেরেন প্রৌঢ়া। কিছুদিন পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে তমলুকে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে পাঠানো হয় কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে। সেখান থেকে ১৯ এপ্রিল তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এমআর বাঙুরে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
শনিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে মহিলার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানান এমআর বাঙুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই তথ্য সামনে আসার পর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে শনিবার সন্ধ্যায় পাঁশকুড়া পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁপাডালি এলাকা সিল করে দেয় পুলিশ। ওই প্রৌঢ়ার পরিবারের ন’জন সদস্যকে তড়িঘড়ি পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের আইশোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রবিবার পাঁশকুড়া থানার পুলিশের পক্ষ থেকে চাঁপাডালি এলাকায় মাইক প্রচার করে কাউকে বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়।
তবে কী ভাবে ওই প্রৌঢ়া করোনায় আক্রান্ত হলেন তা নিয়ে ধন্দে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। পাঁশকুড়া ব্লকের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক শচীন্দ্রনাথ রজক বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া শহরের একজন প্রৌঢ়ার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে এমআর বাঙুর থেকে। কী ভাবে ওই মহিলা করোনা আক্রান্ত হলেন তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে আমাদের ধারণা, হাওড়ায় থাকাকালীন ওই মহিলা কোনও করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে থাকতে পারেন।’’
পাঁশকুড়ার বাসিন্দা প্রৌঢ়ার করোনা আক্রান্ত যোগে সিল করে দেওয়া হয়েছে তমলুক শহরের ওই নার্সিংহোম। সেখানকার চিকিৎসক, নার্স ও সমস্ত কর্মীকে নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে শনিবার বিকেলে ওই প্রৌঢ়া করোনা আক্রান্ত বলে জানার পরেই তমলুক শহরের ওই নার্সিংহোম ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। নার্সিংহোমের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের নিভৃতবাসে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার সকালে নার্সিংহোম এবং সংলগ্ন চত্বর জীবাণুমুক্ত করার কাজ করে পুরসভা ও দমকল দফতর।
রবিবার সকালে তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে করোনা আক্রান্তদের গ্রাম সংলগ্ন নোনাকুড়ি বাজারের পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান জেলাশাসক পার্থ ঘোষ, তমলুকের এসডিও কৌশিকব্রত দে, তমলুক থানার ওসি জলেশ্বর তিওয়ারি। সঙ্গে ছিলেন বিডিও সুমন মণ্ডল, বল্লুক-১ পঞ্চায়েত প্রধান শরৎ মেট্যা। ব্লকের অন্যতম জনবহুল বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত খোলার ব্যবস্থা ছিল। ফের করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষিতে সোমবার থেকে ওই বাজার সকাল ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া বাজারে লোকজনের জমায়েত এড়াতে কড়া পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নিয়ম ভাঙলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণে স্বস্তির খবরও এসেছে জেলায়। মেচেদা আরপিএফের যে কনস্টেবল করোনা আক্রান্ত হয়ে বড়মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেই কনস্টেবলের সঙ্গে ডিউটি করা ১৭ জন আরপিএফ জওয়ানের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে মেচেদা আরপিএফ সূত্রে জানানো হয়েছে।