প্রতীকী ছবি।
জেলার রিপোর্ট বলছে, দুই বোনই করোনা পজ়িটিভ। অথচ রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দুই বোনই নেগেটিভ!
খড়্গপুরের শহরের আরামবাটি এলাকার ওই দুই কিশোরীর করোনা রিপোর্ট নিয়ে বিভ্রান্তিতে গোটা পরিবার। গত ২২ অগস্ট খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে দুই কিশোরীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। মেদিনীপুর মেডিক্যালে পরীক্ষার পরে ২৫ অগস্ট দু’জনের রিপোর্টই আসে পজ়িটিভ। সে কথা বেশ কয়েকবার ফোন করে জানিয়েছে পুলিশ। উপসর্গহীন হওয়ায় দুই বোনকে হোম আইসোলেশনেও থাকতে বলা হয়। তবে ২৬ অগস্ট বিকেল থেকেই ধন্দে পড়েছে পরিবার। কারণ, এসএমএসে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ওই দুই কিশোরী করোনা নেগেটিভ। বুধবার রাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের ওয়েবসাইটে গিয়েও পরিজনেরা যে রিপোর্ট পেয়েছেন, সেখানেও দু’জনই নেগেটিভ। অথচ একবারই নমুনা নেওয়া হয়েছে। নমুনার ক্রমিক সংখ্যাও এক। তা-ও কী ভাবে দু’রকম রিপোর্ট হল, ধন্দ সেখানেই। অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল বলেন, “মেদিনীপুর মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের যে রিপোর্ট আমাদের হাতে রয়েছে তাতে ওই দুই কিশোরী পজ়িটিভ। কিন্তু রাজ্যের ওয়েবসাইটে কী ভাবে ওই রিপোর্ট নেগেটিভ হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছি।”
করোনা রিপোর্ট ঘিরে বিভ্রান্তি নতুন নয়। এর আগে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজ়িটিভ হয়ে আরটিপিসিআরে রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, এমন নজিরও রয়েছে। অবশ্য সে ক্ষেত্রে টাইপের সমস্যার ব্যাখ্যা দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু একই নমুনার দু’রকম রিপোর্ট কী ভাবে এল, স্বাস্থ্য দফতরও কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধীরাও। বিরোধীদের প্রশ্ন, তবে কি করোনার তথ্যে কারচুপি করা হচ্ছে? বিজেপির খড়্গপুর শহর বিধানসভা পর্যবেক্ষক অভিষেক অগ্রবাল বলেন, “আমরা তো বারবার এটা বলেছি, এই রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের আসল সংখ্যা চেপে দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া, পরীক্ষার গরমিল নিয়েও আমাদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনাও তার বাইরে নয়। জেলা ও রাজ্যের দু’রকম রিপোর্টে এই দুই কিশোরী যে বিপদে পড়েছে এর দায় কে নেবে?”
বিপরীত রিপোর্ট নিয়ে বাস্তবিকই সমস্যায় পড়েছে দুই কিশোরীর পরিজনেরা। তাঁরা জানান, দু’জনের কারও কোনও উপসর্গ নেই। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর থেকে ওষুধ দিয়ে গিয়েছে। অথচ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর বলছে রিপোর্ট নেগেটিভ। এমন পরিস্থিতিতে দুই কিশোরী ওই ওষুধ খাবে কিনা, তা নিয়েও ধন্দে পড়েছে পরিবারের। পরিবারের দাবি, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তখন জানানো হয়েছে, ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া রিপোর্টের তথ্যই সঠিক। আবার জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, জেলা থেকে যে পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে সেটা সঠিক।
এতে বিভ্রান্ত দুই কিশোরীর বাবা বলেন, “আমার দুই মেয়ে পজ়িটিভ বলে পুলিশ বারবার জানিয়েছে। পরে আমরা হাসপাতাল ও অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে যোগাযোগ করলেও তাঁরাও বলেন পজ়িটিভ। অথচ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের নম্বরে যোগাযোগ করলে বলে এসএমএস লিঙ্কে ক্লিক করে যে রিপোর্ট এসেছে সেটা সঠিক। তাহলে কোন রিপোর্ট ঠিক ধরে স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া ওষুধ মেয়েদের দেব?”
তার উত্তর এখনও অজানাই।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)