সুনসান মেদিনীপুর মেডিক্যাল চত্বর। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
করোনা আবহে জেলার হাসপাতালগুলিতে কমেছে রোগীর সংখ্যা। অন্য সময়ে দিনে গড়ে যত রোগী আসতেন, এখন তার সিকিভাগও আসছেন না। সপ্তাহ কয়েকের পরিসংখ্যান দেখে এমন ছবিই সামনে আসেছে। সব দেখে চিকিৎসকদের একাংশও মানছেন, বিভিন্ন রকমের উপসর্গ দেখা দিলেও একাংশ রোগী এখন যন্ত্রণা সহ্য করে বাড়িতেই থাকছেন। সব দেখে উদ্বিগ্নও ওই চিকিৎসকেরা। কারণ, রোগ লুকিয়ে রাখা মানেই বিপদ।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, ‘‘হাসপাতালগুলিতে রোগীর সংখ্যা কমেছে। আগে যত রোগী আসতেন, এখন আসছেন না।’’ করোনা আতঙ্কেই কি রোগীর সংখ্যা নিম্নমুখী? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘কেউ কেউ আতঙ্কে রয়েছেন। তবে অহেতুক আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।’’ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) মেদিনীপুর শাখার সম্পাদক কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত মেদিনীপুর মেডিক্যালের চিকিৎসক। তিনিও মানছেন, ‘‘এখন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমেছে।’’
জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এখানে অন্তর্বিভাগগুলিতে দিনে গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৮০০- ৮৫০ জন। মাসে বহির্বিভাগে রোগী আসেন গড়ে ১৫,৯০০ জন। অর্থাৎ, দিনে গড়ে ৫৩০ জন। জরুরি বিভাগে মাসে গড়ে রোগী আসেন ৬,৫৭০ জন। অর্থাৎ, দিনে গড়ে ২২০ জন। আর প্রতি ঘন্টায় ৯- ১০ জন। করোনা আবহে মেডিক্যালের ছবিটা ঠিক কেমন? গত ৩০ এপ্রিলের ছবিটা বলছে, ওই দিন মেডিক্যালের অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি ছিলেন ৫৩৪ জন। এরমধ্যে মাত্র ৯১ জন নতুন রোগী। অর্থাৎ, পুরো দিনে মাত্র ৯১ জন জরুরি বিভাগ হয়ে অন্তর্বিভাগে এসেছেন। ভর্তি হননি, শুধু জরুরি বিভাগে এসেছেন, এমন রোগীর সংখ্যা মাত্র ২! আর বহির্বিভাগে এসেছেন ৫৪৯ জন রোগী। এরমধ্যে নতুন রোগী ৪৩৭ জন, পুরনো রোগী ১১২ জন।
একইভাবে রোগীর সংখ্যা কমেছে জেলার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতেও। কৃপাসিন্ধু বলেন, ‘‘সম্প্রতি ঘাটালের এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক করোনায় আক্রান্ত হন। আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি, এরপর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আরও কমেছে। অনেকে এখন অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে আসতে চাইছেন না। লকডাউনে গণপরিবহণ বন্ধ রয়েছে। ফলে, তাঁরা গাড়ি ভাড়া করেও হাসপাতালে আসতে পারছেন না।’’
মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের এখানে অন্য সময়ে অনেকে শয্যা পান না। ওয়ার্ডের ভিতরে- বাইরে মেঝে জুড়ে রোগীর ভিড় থাকে। এখন ভিড়ই নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আগে লোকের রোগজ্বালা হত, এখন হচ্ছে না, তা তো নয়। ভয়ে অনেকে হাসপাতালে আসছেন না।’’ জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে বেশ কিছু হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। দেখেছি, যাঁরা ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের অনেকেই প্রসূতি। প্রসূতি ছাড়া তেমন কেউ ভর্তি নেই।’’ যে ভাবে মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে, তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন চিকিৎসকদের একাংশ।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)