সৈকত ও তার আশপাশে প্রতিদিনই চোখে পড়ছে এই ছবি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
রাস্তায় টোটো, ইঞ্জিন রিকশার দাপট, সৈকতে পর্যটকদের ভিড়— এটাই দিঘার পরিচিত ছবি। সেই ছবিতে দেখা মিলত, পর্যটকদের যত্রতত্র ফেলা রাখা আবর্জনা এবং দূষণের নিদর্শনও।
কিন্তু সৈকত শহর দিঘার সেই ছবিটাই যেন লকডাউনে আমূলে পাল্টে গিয়েছে। খাঁ খাঁ সৈকতে সমুদ্রের পাড়ে এসে ভাঙছে ঢেউ। টেউ ভাঙার গর্জন বাদ দিলে বাকিটা একেবারই নীরবতা। লকডাউনে সদা চঞ্চল দিঘার পরিবেশ হঠাৎই যেন নির্মল হয়ে গিয়েছে। আর পছন্দের সেই পরিবেশ পেয়ে ভিড় করতে শুরু করেছে পাখির দল।
স্থানীয় পক্ষী বিশারদরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরে যে সব পাখিকে একেবারেই দেখা যায়নি, লকডাউন পর্বে সুনসান দিঘা কার্যত দখল করেছে তারা। মূলত দিঘা মোহনা সংলগ্ন সমুদ্র তীরবর্তী ছোট ছোট খাল এবং তার পাশ্ববর্তী ঝোপে ডানা মেলে এ রকম পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় মিশ্র বলেন, ‘‘বিকেল হলেই বালিহাঁস সারিবদ্ধ ভাবে খালের আশপাশে ভিড় করে। সন্ধ্যা নাগাদ তারা বাসায় ফেরে, তখন বোঝা যায় তাদের সংখ্যাটা!’’
শীতের শুরুতে বহু পরিযায়ী পাখি দিঘায় চলে আসে। পরে গরম পড়া শুরু হলেই তারা চলে যায় অন্য ঠিকানায়। এ বছর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ হতে চলল, কিন্তু পরিযায়ীদের অনেকেরই এখনও ঠিকানা সৈকত ও তার আশপাশের এলাকা। সমুদ্র সংলগ্ন জলাশয়গুলিতে জলে চুটিয়ে স্নান করছে এই সব পাখির দল। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে সাইবেরিয়া থেকে হিমালয় পর্বত পেরিয়ে আসা ‘হুইসলিং ডার্’, তেমনি এদেশের পানকৌড়ি, বিভিন্ন প্রজাতির বক, গ্রে হেরণের মতো পাখিও রয়েছে। স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সত্যব্রত দাস বলেন, ‘‘করোনা মানুষকে অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়ে গেল। ইদানীং সৈকত শহরে দূষণ নেই বললেই চলে। তাই পক্ষীকূল নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারছে।’’
লকডাউনে যে পরিবেশ দূষণ কমেছে, তার প্রমাণ মিলেছে বিশ্বজুড়ে। কোথাও রাস্তায় দেখা যাচ্ছে বন্য প্রাণী তো মুম্বইয়ের ঝিলে ফিরেছে ফ্লেমিঙ্গোর ঝাঁক। একই অবস্থা দিঘাতেও। এখানে সারাদিন ধরে পাখিরা সামুদ্রিক ঝিনুক আর ছোট ছোট মাছ ধরে খায়। সূর্যাস্ত হলে বাসায় ফিরে যায়।
যা দেখে পরিবেশপ্রেমীরা বলছেন, ‘‘পর্যটকদের কোলাহলের থেকে পাখির এই কলরব ঢের ভাল!’’