এগরাকাণ্ড নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি আপনাদের সকলের কাছে মাথা নত করে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি।’’ —নিজস্ব চিত্র।
এগরার অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত এবং আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে নিজেই এ কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনা থেকে আমাদের চোখ খুলে গিয়েছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট আসবে। অবৈধ বাজি কারখানায় কাজ করে জীবন নষ্ট যেন না হয়। শুধুমাত্র গ্রিন ফায়ার ক্র্যাকারের ক্লাস্টার তৈরি হবে ফাঁকা জায়গায়। তাতে চাকরিটা বাঁচবে। এমন দুর্ঘটনাও হবে না।’’ পাশাপাশি, ঘটনার ১১ দিন পর তিনি ঘটনাস্থলে আসার জন্যও দুঃখপ্রকাশ করেন। স্বীকার করেন এই ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছিল।
শনিবার খাদিকুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি এখানে জনসভা করতে আসিনি। তবে একটু আগেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আকাশ মেঘলা ছিল। তাই পরিস্থিতি আমায় অ্যালাউ করেনি। তবে আজ সকালেও যখন বৃষ্টি হচ্ছে আমরা রিস্ক নিয়ে বেরিয়ে আসছি। কারণ, আমাকে আসতেই হবে এক বার। আমি আপনাদের সকলের কাছে মাথা নত করে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘শব্দবাজি কারখানা অবৈধ। লোভে পড়ে অনেকে এই বাজি তৈরি করতে যান। তাতে প্রাণহানি হয়।’’ তিনি জানান, নিহতদের পরিবারের হাতে আড়াই লক্ষ করে টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এবং পরিবার পিছু একটি করে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হচ্ছে। মমতা নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ওই চেক তুলে দিয়ে বলেন, ‘‘অন্তত সংসার চালান।’’
এর পর প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘নিহত এবং আহতদের পরিবারের দুঃখ কখনও শেষ হয় না। তবু লড়াই করতে হবে। এটা আমার হাতে ছিল না, আপনার হাতেও ছিল না। কিন্তু অবৈধ বাজি তৈরি করা ঠিক নয়। যিনি এ সব তৈরি করতেন (ভানু বাগ), তিনিও মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবারের দু’জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ এর পর ভানু প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘কটকে একটি নার্সিংহোমে নাম বদল করে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু আমাদের পুলিশ সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল। তাঁকে পুলিশ গ্রেফতারও করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার তিনি কিছু বলার আগে মৃত্যু হয় তাঁর।’’ এর পর তিনি স্থানীয়দের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা নজর রাখুন অবৈধ বাজি যদি কোথাও তৈরি হয়, সঙ্গে সঙ্গে ওসিকে রিপোর্ট করবেন। যদি সেই ওসি অ্যাকশন না নেন, তা হলে আমার উপর ছেড়ে দেবেন। আমি দু’দিনে ওই ওসিকে চেঞ্জ (বদলি) করে দেব।’’
খাদিকুলকাণ্ডের পর এগরা থানার আইসি মৌসম চক্রবর্তীর বদলির ঘটনা উল্লেখ করে প্রশাসনিক গলদের কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এখানেও নতুন ওসি এসেছেন। আগে যিনি ছিলেন, তাঁকে বলা সত্ত্বেও তিনি অ্যাকশন নেননি বলে শুনেছি। সঠিক সময়ে ইন্টেলিজেন্স (গোয়েন্দা) যদি কাজ করত, তা হলে এমন জিনিস ঘটত না।’’ মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ভিন্রাজ্য থেকে অস্ত্র আমদানি করা হচ্ছে বাংলায়। তেমনই এখান থেকে ওড়িশার মতো পড়শি রাজ্যে শব্দবাজি ইত্যাদি যায়। পুলিশকে তাঁর নির্দেশ, ‘‘তাই বর্ডারগুলো সিল করুন। যে ছেলেমেয়েরা হোমগার্ডে চাকরি পেয়েছেন, এঁদের ওই বর্ডারে নিযুক্ত করুন। এঁরা এলাকাগুলো চিনতে পারবেন। তাতে তাঁদের বাইরেও যেতে হবে না। নিজের এলাকাও ভাল করে চিনতে পারবেন। সরাসরি পুলিশের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারবেন।’’