এগরার খাদিকুলে বিস্ফোরণকাণ্ডের ১১ দিন পর ঘটনাস্থলে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এগরার খাদিকুলে বিস্ফোরণে নিহত এবং আহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। মমতা বলেন, ‘‘এই ঘটনা থেকে আমাদের চোখ খুলে গেছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট আসবে। অবৈধ বাজি কারখানায় কাজ করে কারও জীবন যেন নষ্ট না হয়।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত হয়েছে, শুধুমাত্র গ্রিন ফায়ার ক্র্যাকার্স ক্লাস্টার তৈরি হবে ফাঁকা জায়গায়। তাতে চাকরিটাও বাঁচবে। এমন দুর্ঘটনা হবে না। শব্দবাজি কারখানা অবৈধ। লোভে পড়ে অনেকে এই বাজি তৈরি করতে যান। তাতে প্রাণহানি হয়।’’ তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিবারের হাতে আড়াই লক্ষ করে টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এবং পরিবারপিছু একটি করে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হচ্ছে। মমতা নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে টাকার চেক তুলে দিয়ে বলেন, ‘‘অন্তত সংসার চালান।’’ মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেন আরও কারও চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কি না। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির খুদে সদস্যদের পড়াশোনা চালানোর অসুবিধা হলে সেটাও প্রশাসন দেখবে বলে জানান মমতা।
খাদিকুলে গত ১৬ মে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় কারখানার মালিক ভানু বাগ-সহ মোট ৯ জনের। সিআইডি তদন্তে উঠে এসেছে, বিস্ফোরণের পর আহত ভানু পড়শি রাজ্য ওড়িশায় পালিয়ে গিয়ে সেখানকার একটি হাসপাতালে জাল আধার কার্ড দিয়ে ভর্তি হন। পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
অন্য দিকে, এগরাকাণ্ড নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর অব্যাহত। আগেই নিহত এবং আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সেখান থেকে বেশ কয়েকটি দাবি তোলেন। যার মধ্যে রয়েছে এনআইএ তদন্ত করতে হবে। নিহতদের পরিবারপিছু ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। পাশাপাশি, ভানুকে তৃণমূলের নেতা বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। শাসকদলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা দাবি করেন, ভানু ‘অধিকারীদের ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন। এই চাপান-উতোরের মধ্যে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল এগরায় গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এগরা-সফর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
বিস্ফোরণকাণ্ডের ১১ দিনের মাথায় কেন এগরা যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, এ নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর এগরা-সফরকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘খাদিকুলে হেলিকপ্টার করে যাবেন, হেলিপ্যাড তৈরি হয়েছিল। গতকাল জামাইষষ্ঠী ছিল, আমি বলেছিলাম ভানু বাগের বাড়িতে জামাইষষ্ঠী করতে যাবেন। কালকে যাননি। আগামিকাল ভানু বাগের শ্রাদ্ধ আছে। ভানু বাগ ওঁর সম্পদ। ভানু বাগের শ্রাদ্ধে খেতে যাচ্ছেন।’’