মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতো (ফাইল হাতে) এবং অন্যান্য। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলা এবং মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ধৃতদের মধ্যে ছিলেন কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতো। পরে জামিন পেয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম সফরে এসে সেই রাজেশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক দিক থেকে এই সাক্ষাৎ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, অভিষেকের কনভয়ে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া রাজেশের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর কথাবার্তা। দ্বিতীয়ত, পঞ্চায়েত ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে বেশ কয়েকটি বুথে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন কুড়মি প্রতিনিধিরা। তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করবেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে রাজেশ বলেন, তাঁদের বেশ কিছু বিষয়ে কথা হয়েছে। তা হলে কুড়মিরা কি তৃণমূলকে সমর্থন করছে? রাজেশের বক্তব্য, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলকে কুড়মি নির্দল প্রার্থীরা সহযোগিতা করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলির উদারতা থাকলে তারা কুড়মি প্রার্থীদের সমর্থন করুক।’’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় ঝাড়গ্রাম আসনটি বিজেপির দখলে যায়। সেই ধাক্কা সামলে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সেখানে জয়ী ফেরে তৃণমূল। তবে এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুড়মিদের জাতিসত্তার আন্দোলন, কুড়মি আদিবাসীদের ভাগাভাগির অভিযোগ ঘিরে কিছুটা শঙ্কায় ছিল শাসক শিবির। বিশেষত মন্ত্রী বিরবাহার গাড়িতে হামলার অভিযোগে কুড়মি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়েছিল। বস্তুত, এর প্রতিবাদে পঞ্চায়েত ভোটে কুড়মিরা নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করেন। কিছু আসনে তাঁরা জিতেওছেন। তবে তৃণমূলকে বিশেষ বেগ দিতে পারেননি। বিরোধীশূন্য করে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ পেয়েছে তৃণমূল। আটটি পঞ্চায়েত সমিতির সবক’টি এবং বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ তারাই। মমতা নিজে বার বার বলেছেন, আদিবাসী জনজাতি, কুড়মি-সহ গোটা জঙ্গলমহল তাঁর প্রিয়। কুড়মিদের দাবি মেনে এ বার পঞ্চায়েত ভোটের পরই ‘করম পরব’-এ পূর্ণ ছুটি ঘোষণা করেন তিনি। আদিবাসীদের জন্যও একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন।
মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে পৌঁছনোর পর রামকৃষ্ণ সারদাপীঠ (কন্যা গুরুকূল)-এর মেয়েরা মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। সেখান থেকে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন মমতা। কথা হয়েছে মন্ত্রী বিরবাহার সঙ্গেও। এ ছাড়া জাকাত মাঝি পরগনা মহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জাকাত মাঝি পরগনার প্রতিনিধিরা জানান, তাঁদের বিভিন্ন দাবি গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামিদিনে তাঁদের যে কোনও সমস্যার সমাধানেরও পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মমতা।
বুধবার, ৯ অগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন সূত্রে খবর, সমাজের গুণীজনদের সংবর্ধনা জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা তাঁর।