আইআইটিতে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার শোভাযাত্রা। —নিজস্ব চিত্র।
অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার আঁচ খড়্গপুর আইআইটিতেও। সোমবার হস্টেলে নিরামিষ খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি বড় পর্দায় অযোধ্যার অনুষ্ঠানের সম্প্রচার, পরে ক্যাম্পাসে রামের নামে শোভাযাত্রাও হয়েছে।
আইআইটি-র কয়েকটি হলে (হস্টেল) এ দিন নির্দেশিকা জারি করে প্রাতরাশে, দুপুরে ও রাতে নিরামিষ খাবার দেওয়া হয়। বিভিন্ন হলে বাঁধা হয়েছিল রাম-নামের গেরুয়া পতাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন নির্দিষ্ট ধর্মীয় আচার পালিত হবে, প্রশ্ন উঠেছে। তবে এ সব একান্তই পড়ুয়াদের সর্বসম্মতিতে হয়েছে বলে দাবি আইআইটি কর্তৃপক্ষের। তবে এ নিয়ে কেউ প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি। ফোন ধরেননি রেজিষ্ট্রার অমিত জৈন। জবাব দেননি এসএমএসেরও।
আইআইটির রাধাকৃষ্ণন হল, বিআর অম্বেডকর হল, পটেল হল থেকে ছাত্রীদের সিস্টার নিবেদিতা হলেও নিরামিষ খাওয়া ছাড়া পড়ুয়াদের অন্য বিকল্প ছিল না। রাধাকৃষ্ণন হলে নির্দেশিকা জারি করে নিরামিষ খাওয়াদাওয়া হয়েছে। ওই হলের আবাসিক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া অর্কপ্রভ মণ্ডল বলেন, “আমাদের হল কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল থেকেই নিরামিষ খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। রামমন্দির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” রাধাকৃষ্ণন হল কাউন্সিলের সভাপতি চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া মহিম জৈনের যুক্তি, “পাঁচশো বছর পরে অয্যোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন। দেশ জুড়ে উৎসব হচ্ছে। আমরাও দিনটি পালনে সর্বসম্মতিক্রমে নিরামিষ খাবারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেউ আপত্তি করেনি।” তবে তাঁর স্বীকারোক্তি, “ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলায় এখন মনে হচ্ছে শুধু নিরামিষ খাবারের সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে।”এমনিতে আইআইটি-র হস্টেলে প্রাতরাশে ডিম সেদ্ধ দেওয়া হয়। এ দিন তা দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিবেদিতা হলের আবাসিক অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্রীর কথায়, “আমরা তো অন্য ধর্মের উৎসবও পালন করি। তবে সেটা নিজেদের মধ্যে। এ ভাবে প্রতিষ্ঠান চত্বর জুড়ে শোভাযাত্রা হয় না। আর খাবারে নিরামিষ-আমিষ দুই-ই থাকে। তবে পাঁচশো বছরের আবেগের কথা ভাবলে মনে হচ্ছে একুটু ঠিকই আছে।” কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র পটেল হলের আবাসিক মনোসিজ সরকারও জানালেন, “আমাদের হলেও রামমন্দির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে নিরামিষ খাবার দেওয়া হয়েছে।”অধ্যাপকদের মধ্যেও বিতর্ক চলেছে দিনভর। কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের এক অধ্যাপকের দাবি, “আমাদের প্রতিষ্ঠানে গৈরিকীকরণের চেষ্টা চলছে। পড়ুয়াদের এত সাহস নেই যে তারা নিজেরা এমন সিদ্ধান্ত নেবে। কর্তৃপক্ষের উঁচু মহলের ইন্ধন নিশ্চয়ই রয়েছে।”