খড়িকা এলাকার ওই বাড়ি ঘিরে দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিল রোজগেরে ছেলে। জীবনে কত বড় বিপর্যয় আসতে চলেছে তখনও বোঝেননি সবংয়ের খড়িকা এলাকার বাসিন্দা স্বপন নায়েক (নাম পরিবর্তিত)। বোঝার কথাও ছিল না। লকডাউনে তো অনেকেই ঘরে ফিরে এসেছেন। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ফিরে যাওয়ার কথাও ছিল তাঁর ছেলের। তা আর হল কই!
লকডাউনের মধ্যেই আসে ঘূর্ণিঝড়। ভেঙে যায় বাড়ির অ্যাসবেস্টসের ছাউনি। ক্ষতি হয় আনাজ চাষে। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই জানা যায় স্বপনের ছেলে স্বর্ণেন্দুর (নাম পরিবর্তিত) শরীরে একইসঙ্গে থাবা বসিয়েছে ক্যানসার ও করোনা। তিনি এখন কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বপনের নায়েকের ছোট মুদির দোকানটি আপাতত বন্ধ।
লকডাউনের আগে স্বর্ণেন্দু কাজ করতেন সাঁতরাগাছিতে একটি পরিশ্রুত জলের বোতলের সংস্থায়। লকডাউনে বাড়ি ফিরে আসার পরে প্রথম কয়েকদিন ঠিকই চলছিল। আমপানের আগেই চাষের ধান বাড়িতে তুলে রাখায় মুখ থুবড়ে পড়তে হয়নি। নিজেদের চেষ্টায় মেরামত করেছিলেন ভেঙে যাওয়া অ্যাসবেস্টসের ছাউনি। তার মাঝেই শারীরিক অসুস্থতা বাড়তে থাকে তাঁরা। কলকাতায় গিয়ে এক বেসরকারি হাসপাতালে যেতে পরীক্ষায় ধরা পড়ে তিনি মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত। স্থানীয় সাংসদ মানস ভুঁইয়ার সহযোগিতায় ১ জুন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তির কথা ছিল। তবে অসুস্থতা বাড়ায় ৩১ মে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে। সেখানে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। গত ৪ জুন রির্পোট পজ়িটিভ বলে জানা যায়।
স্বর্ণেন্দুর বাবার আক্ষেপ, “আপাতত সংসারে কোনও রোজগার নেই। ছেলের জন্য প্রতিদিন হাসপাতালে ৩ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। সরকারি কোনও সাহায্য পাইনি। ছেলেকে বাঁচাতে তো হবেই। প্রয়োজনে ভিটে-জমি বিক্রি করে গাছতলায় বসতে হলে তাই বসব!”
স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য লিপিকা মেইকাপ বলেন, “আমপানে ওঁদের বাড়ির অ্যাসবেস্টসের ছাউনি ভেঙেছিল। এ বার ছেলেটা একইসঙ্গে ক্যানসার ও করোনায় আক্রান্ত। সত্যিই ওঁরা বিপর্যস্ত।’’ তাহলে কোনও সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না কেন? তাঁর উত্তর, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েত এলাকায় আমপানে ৩৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ব্লকে তালিকা পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে মাত্র ২টি পরিবার সাহায্য পেয়েছে। আমরা এই যুবকের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।” সবংয়ের বিডিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সহানুভুতির সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। আর সাংসদ মানস ভুঁইয়া বলছেন, "ওঁদের বিষয়টি জানি। আমি ও বিধায়ক গীতা ভুঁইয়া অবশ্যই ওঁদের সবরকম সাহায্য করব।"