রক্তদানের অঙ্গীকারে পথে ব্যবসায়ী

বছর পনেরো আগে রক্তের অভাবে এক প্রতিবেশীর মৃত্যু দেখেছিলেন মানস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১৩
Share:

কেন রক্তদান, বোঝাচ্ছেন মানস।

দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে নিছক ঠাকুর দেখতে বেরোননি পাঁশকুড়া স্টেশনের ফল ব্যবসায়ী মানস গিরি। বরং মণ্ডপে মণ্ডপে তাঁর পারিবারিক রক্তদান শিবিরের বার্তা ছড়িয়ে দিতে ছুটে বেড়িয়েছেন। সোমবার সকালে পাঁশকুড়া স্টেশন বাজারে বর্ণাঢ্য র‍্যালির আয়োজন করা হয়েছিল। র‍্যালির সামনে হাতজোড় করে রক্তাদানের অঙ্গীকারে সকলকে আহ্বান জানাতে দেখা গেল মানসকে। দিনের শেষে ফলও মিলল হাতেহাতে। গিরি পরিবারের পারিবারিক রক্তদান শিবিরে রক্তদান করলেন শতাধিক মানুষ।

Advertisement

বছর পনেরো আগে রক্তের অভাবে এক প্রতিবেশীর মৃত্যু দেখেছিলেন মানস। সেদিন মনটা বিচলিত হয়ে উঠেছিল তাঁর। মনে মনে সঙ্কল্প করেছিলেন, এলাকার কেউ যাতে রক্তের অভাবে মারা না যান তার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবেন। মানসের পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৩৫। প্রত্যকে বছর লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে মানসের বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয় পরিজন। নিজের পরিবার ও আত্মীয়দের নিয়ে বাড়িতেই ১৪ বছর আগে পারিবারিক রক্তদান শিবির শুরু করেছিলেন মানস। তার পর থেকে আজও তা পালন করে আসছেন। প্রতি বছর লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন পাঁশকুড়ার গিরি পরিবারের রক্তদান শিবির কার্যত উৎসবের চেহারা নেয়। এ বার রক্তদান শিবিরে পরিবারের ১৫ জন সদস্য রক্তদান করেছেন। তবে এর জন্য দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে পাঁশকুড়ার বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে শিবিরের খবর জানান দিতে মানস ঘুরে ঘিরে ফ্লেক্স টাঙান। বিলি করেন লিফলেটও। পথ চলতি মানুষ, দোকানদার, ব্যবসায়ীদের তিনি রক্তদান করার জন্য আহ্বান জানান। আর তার ফলেই সোমবার গিরি পরিবারের রক্তদান শিবিরে অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন।

এদিন সকালে বাড়িতে বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন মানস। এলাকার প্রায় ৩০০জন ছাত্রছাত্রী যোগ দিয়েছিল। প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আসা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের রক্তদানের আবেদন জানান মানস। যা অনেক অভিভাবকই ফেলতে পারেননি। শিবিরের উদ্বোধন করেন রাজারহাট রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী আত্মব্রতানন্দ। উপস্থিত ছিলেন পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান নন্দকুমার মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘শুধু মুখে না বলে নিজের পরিবার দিয়ে মানস দেখিয়েছেন রক্তদানের গুরুত্ব। এই ভাবে সমাজের সব স্তরের মানুষের রক্তদানে এগিয়ে আসা উচিত।’’

Advertisement

আর মানসের কথায়, ‘‘রক্তের অভাবে যাতে কেউ না মারা যান, তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।’’ স্ত্রী সুদীপ্তা বলেন, ‘‘শারদোৎসবে সকলেই আমরা আনন্দ করি। এই আনন্দের মাঝে আমাদের সামান্য চেষ্টায় যদি কারও প্রাণ বাঁচে তবেই এই উৎসবের সার্থকতা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement