WB Panchayat Election 2023

কালো অতীত উস্কে সাদা থান পদ্ম-প্রার্থীকে

বাড়িতে সাদা থান আর রজনীগন্ধার মালা পাঠিয়ে ফের বিরোধী প্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৩ ০৮:২৮
Share:

বিজেপি প্রার্থীর বাড়িতে সাদা থান, ফুল-মিষ্টি।  —নিজস্ব চিত্র।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর, হুগলির ধনেখালির পরে এ বার পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি। বাড়িতে সাদা থান আর রজনীগন্ধার মালা পাঠিয়ে ফের বিরোধী প্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে কাঁথি-১ ব্লকের যে সাবাজপুট এলাকায় বিজেপির মহিলা প্রার্থীকে এ ভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তার লাগোয়াই হল খেজুরি। বাম আমলে সেখানে এ ভাবেই তৎকালীন বিরোধী, মূলত তৃণমূল প্রার্থীদের বাড়িতে সাদা থান পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হত বলে অভিযোগ। তখন অবিভক্ত মেদিনীপুরের কেশপুর, গড়বেতায় এমন অভিযোগ ছিল বেশি। পুরনো সেই `সাদা থানের সংস্কৃতি`এ বার গ্রামের ভোটে ফের ফিরছে।

২০১৮ সালে ভোটে খেজুরি-২ ব্লকের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছিল তৃণমূল। তবে এ বার কিছু বিজেপি প্রার্থী রয়েছেন। বিজেপির অভিযোগ, এ দিন সকালে সাবাজপুট অঞ্চলের কৃষ্ণখয়রাতিবাড় গ্রামে দলীয় প্রার্থীর বাড়ির বারান্দায় তৃণমূলের লোকজন সাদা থান, মিষ্টির প্যাকেট এবং একটি রজনীগন্ধা ফুলের মালা রেখে যায়। সঙ্গে চিরকুটে হুমকি - 'তোর স্বামীর ভালো চাস তো সরে যা'।

Advertisement

কৃষ্ণখয়রাতিবাড় গ্রামের আসনটি এ বার মহিলা সংরক্ষিত। লড়াই মূলত ত্রিমুখী- তৃণমূলের উজ্জ্বলা পাল, বিজেপির নীলিমা দত্ত এবং সিপিএমের সুজাতা নায়ক। নীলিমার দাবি, "এ দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার শ্বশুর প্রথম প্রথম ও সব দেখতে পান। যা বুঝছি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্যই আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। না হলে স্বামীকে প্রাণে মেরে ফেলবে।" নীলিমার স্বামী হৃষিকেশ দত্তের কথায়, "সোমবার রাত এগারোটা নাগাদ ভোটের বৈঠক সেরে যখন বাড়ি ঢুকি তখনও তৃণমূলের একদল দুষ্কৃতী মদ্যপ ব্যবস্থায় কটুক্তি করছিল। তারপর এই হুমকি।" যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এলাকার তৃণমূল নেতা রামগোবিন্দ দাস। তাঁর দাবি, "ওই বুথে আমরা তিনশোর বেশি ভোটে জিতব। সেটা বুঝেই বিজেপি নাটক করছে।"

১৯৭৭ সাল থেকে বরাবর সাবাজপুট গ্রাম পঞ্চায়েত ডানপন্থীদের দখলে। তবে স্থানীয় হাই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি নিয়োগ ঘিরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর রেষারেষি চলছে। তার জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মী সম্মেলন এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নব জোয়ার কর্মসূচি বয়কট পর্যন্ত করেন এলাকার অনেক তৃণমূল নেতা। তারপরেও তাঁরা দলের টিকিট পেয়েছেন। প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রামগোবিন্দ তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেও গিয়েছেন।

তবে এ সব ছাপিয়ে চর্চায় সাদা থান সংস্কৃতির প্রত্যাবর্তন। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সৌমেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,"তৃণমূল জেলায় সিপিএমের পুরনো সংস্কৃতির আমদানি করছে।" তবে পুলিশে লিখিত অভিযোগ হয়নি। কেন? সৌমেন্দুর জবাব, "এতটাই ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে যে আমাদের প্রার্থী বাড়ি থেকে বেরোতেই পারছেন না।" তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা দাবি,"বিজেপির লোকেরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আদি এবং নব্য বিজেপির মধ্যে ওখানে দ্বন্দ্ব রয়েছে।"

খেজুরি এবং ভাজাচাউলিতে যে সময় সাদা থান পাঠানোর অভিযোগ উঠত, তখন হিমাংশু দাস, শেখ রবিউল, বিজন রায়, প্রজাপতি দাসের মতো সিপিএম নেতাদের দাপট ছিল। বর্তমানে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হিমাংশুর অবশ্য দাবি, "এই সংস্কৃতি এই জেলায় এটাই প্রথম। শুধু অপপ্রচারের জন্য বাম আমলের কথা বলা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement