স্মৃতি: গানের দৃশ্যে তাপস পাল (বাঁদিকে)। ফুল বাগানে অসিত এবং প্রদীপ। নিজস্ব চিত্র
সাতসকালে খবরটা শুনেই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল পাঁশকুড়ার ফুলচাষি অসিত হাইতের। ৩৭ বছর আগে যে মানুষটার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ মিলেছিল, তিনি গত হয়েছেন মঙ্গলবার! সত্যিটা মানতে কষ্টই হচ্ছিল অসিতের।
এ দিন মুম্বইয়ের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে অভিনেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ তাপস পালের। তাঁর মৃত্যুর খবর শুধু অসিত নন, মনখারাপ পাঁশকুড়ার জানাবাড় গ্রামের অন্য ফুলচাষিদেরও।
সালটা ১৯৮৩। ওই বছর ৩ ফেব্রুয়ারি এই জানাবাড় গ্রামে শ্যুটিং হয়েছিল অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালিত হরিশ্চন্দ্র-শৈব্যা সিনেমার কয়েকটি দৃশ্য। সেদিন শ্যুটিংয়ে হাজির ছিলেন তাপস পাল, সন্ধ্যা রায় এবং অন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। গ্রামের গাঁদা এবং কসমস ফুলের বাগানে মান্না দে’র গাওয়া ‘ফিরে এল হরিশ্চন্দ্র’ গানের প্রথম দৃশ্যতে তাপস পালের সঙ্গে ফুল বাগানের মালির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন এলাকার ছ’জন যুবক। তাঁদের মধ্যে ছিলেন তখন নবম শ্রেণিতে পাঠরত অসিত। অসিতের বাবার জমিতে শ্যুটিং হয়েছিল। বর্তমানে অসিতের বয়স ৫২।
তাপসের মৃত্যুর খবর শুনে অসিত বলেন, ‘‘নিজেদের জমিতে ফুল চাষ করে এখনও গর্ব হয়। কারণ এখানে তাপস পাল, সন্ধ্যা রায়ের মতো অভিনেতা,অভিনেত্রীরা শ্যুটিং করে গিয়েছেন। তাপস পাল নেই শুনে খারাপই লাগছে।’’ সারাদিন ভারাক্রান্ত মনে মোবাইলে সিনেমার পুরনো দৃশ্যে বারবার দেখছিলেন তিনি।
স্থানীয় ফুলচাষি প্রদীপ মাইতির গাঁদা বাগান ওই গানে একাধিকবার দেখা গিয়েছে। সেই জমিতে এখন আর গাঁদা চাষ করেন না প্রদীপ। তার বদলে হয় চন্দ্রমল্লিকার চাষ। এদিন সেই জমিতেই চন্দ্রমল্লিকার বাগানে কাজ করছিলেন প্রদীপ। কাজের ফাঁকে তিনি ফিরে গেলেন ৩৭ বছর আগের স্মৃতিতে। প্রদীপ বলেন, ‘‘সেদিন শ্যুটিং দেখতে এলাকার হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। তাপস পাল ও সন্ধ্যা রায়কে বসানো হয়েছিল শম্ভুনাথ ভুঁইয়া নামে আমদের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে। বাড়ির বারান্দায় ওঁদের মেকআপ করানো হয়েছিল। আমার এই ফুলের বাগানেই গানের প্রথম দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছিল।’’
তাপসের মৃত্যুর খবর পেয়ে জানাবাড় গ্রামের ফুলচাষিদের একাংশ এ দিন জড়ো হয়েছিলেন সেই ফুল বাগানে, যেখানে শ্যুটিং করেছিলেন তাপস। সম্প্রতি পাঁশকুড়া দোকান্ডা গ্রামে ফুল বাগিচার আকর্ষণে ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার পর্যটক। দোকান্ডা ছাড়া পাঁশকুড়ার আরও অনেক জায়গায় ফুলের চাষ হয়। তবে এখানে হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের বক্তব্য, এখানের যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে, তাতে আরও শ্যুটিং হতে পারে। নস্করদিঘি গ্রামের বাসিন্দা সুমন্ত পতি বলেন, ‘‘পরমা সিনেমার শ্যুটিংয়ে এখানে এসেছিলেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। আসলে পাঁশকুড়ার ফুল বাগিচার সৌন্দর্য শ্যুটিং করার মতোই। আমরা চাই শ্যুটিংয়ের জন্য আর পরিচালক এখানে আসুক। তা হলে এলাকার আর্থ সামাজিক চেহারা বদলে যাবে।’’