সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘ভাই ওই নম্বর কোনও ভাবেই পাবে না। হার্ড কপি প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখা হোক।’’ —নিজস্ব চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসকদল। কলকাতা হাই কোর্টের একের পর এক রায়ে চাকরি বাতিল হচ্ছে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের। গ্রুপ সি বা তৃতীয় শ্রেণির কর্মীর চাকরি করতেন রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোর ভাই। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে যে ৮৪২ জন গ্রুপ সি কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে, তার মধ্যে এক জন মন্ত্রীর ভাই। আর শনিবার এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেন শ্রীকান্ত। এসএসসির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে ওএমআর সিটের ফরেন্সিক পরীক্ষারও দাবি করলেন মন্ত্রী।
শনিবার মেদিনীপুর শহরে তৃণমূল কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘ভাই ওই নম্বর কোনও ভাবেই পাবে না। হার্ড কপি প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখা হোক। এসএসসি-র ত্রুটিবিচ্যুতির শিকার হয়েছে ও। ৫ বছর ধরে চাকরি করছে। এসএসসি তো সেই সময় তালিকা প্রকাশ করতে পারত! তা হলে একে চ্যালেঞ্জ করতে পারত। কিন্তু সে সব গোপন রেখে ‘কোয়ালিফায়েড’ করল, তার পর ইন্টারভিউতে ডাকল, কম্পিউটার টেস্টও নিল। সে সবের পর চাকরি দিল। এখন পাঁচ বছর পর বলছে, ‘তোমার নম্বর ভুল!’ দু’রকম কথাবার্তা হচ্ছে না?’’
উল্লেখ্য, স্কুলে গ্রুপ সি পদে চাকরির ক্ষেত্রে ওএমআর সিটে জালিয়াতির অভিযোগে রাজ্যের ৮৪২ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশে ওই পদ পূরণে নোটিসও দিয়ে দিয়েছে এসএসসি। তবে ওই বাতিল হওয়া কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রী শ্রীকান্তের ভাই খোকন মাহাতোর। এ নিয়ে মন্ত্রীর অভিযোগ, এর ফলে তাঁর সম্মানহানি হচ্ছে। এমনটাও তো হতে পারে যে এসএসসি-র ভুলে ৫০ নম্বর ৫-ও হয়েছে। আদালতে পরে যা তা-ই প্রমাণিত হয়, সে ক্ষেত্রে এসএসসির ভূমিকা কী হবে? তাঁর এবং তাঁর পরিবারের যে বিতর্কের মুখোমুখি হলেন, সেটারই বা কী হবে! তাঁর কথায়, ‘‘এসএসসির ত্রুটিবিচ্যুতির শিকার হতে হচ্ছে নিরীহদের। চাকরির পাঁচ বছর পর কেন তালিকা প্রকাশ করা হল? কেন আগেই চাকরিপ্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করল না এসএসসি?’’ একই সঙ্গে মন্ত্রী জানান, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কাজ করছে এসএসসি। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতার উদাহরণ টেনে এনে সাম্প্রতিক সময়ে আদালতের একাধিক রায় নিয়েও মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘আদালতে বিচার চলছে। আদালতেই বিচার হবে। কিন্তু এখানে আমার প্রশ্ন, ভাইয়ের চাকরি এসএসসি বাতিল করেছে। উত্তরপত্র যাচাই করার জন্য আমরা উচ্চ আদালতে মামলা করব।’’
শ্রীকান্ত আরও বলেন, ‘‘দু’দফায় ৮৪২ জনকে চাকরি থেকে বাতিল করল। ওএমআর সিটও প্রকাশ করল। তাতে দেখা যাচ্ছে কারও কারও নাম ফাঁকা আছে। এটা কেমন চেকিং লিস্ট? কেউ চাকরি পাবেন, না কি তাঁর চাকরি যাবে, সেটা এখন বিচারসাপেক্ষ। কিন্তু এর মাঝখানে যে কৌশল তৈরি হয়েছে। ফ্রেশদেরও (মন্ত্রী বলতে চেয়েছেন, যাঁরা স্বচ্ছ ভাবে চাকরি পেয়েছেন) বলি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা রাজনীতির শিকার হচ্ছেন।’’