বন্ধ হয়ে যায়নি মমতার নন্দীগ্রামের সভার প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র
নতুন বছরের শুরুতেই ‘দাদা’-‘দিদি’র ‘লড়াই’ দেখতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন নন্দীগ্রামবাসী। পিঠোপিঠি দু’দিনে জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামে জনসভা করার কথা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর। কিন্তু সোমবার তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারির নির্ধারিত জনসভায় আসছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বদলে ওই দিন নন্দীগ্রামে একটি কর্মিসভা করবেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। যদিও পরদিন ৮ জানুয়ারি শুভেন্দুর সভার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন বিজেপি’র জেলা নেতৃত্ব।
৭ জানুয়ারি মমতার জনসভা বাতিল হওয়ার কারণ হিসাবে উঠে এসেছে রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অখিল গিরির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তত্ত্ব। যা নিয়ে সমাজ মাধ্যমে যেমন বিজেপি’ কর্মী-সমর্থকেরা তৃণমূলকে কটাক্ষ করা শুরু করেছেন। তেমনই এ নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দুও। দিলীপের কটাক্ষ, মমতা ভয় পেয়েছেন। আর শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের কর্মসূচি সম্পর্কে বলতে পারব না। আমি তৃণমূলের কেউ নই। তবে তৃণমূল দল তো নয়, কোম্পানি। সেই কোম্পানিতে কখন কী হবে সেটা ওই কোম্পানি ঠিক করবে। আমি কেন বলতে যাব। আমি তৃণমূলের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে বিজেপির সদস্যপদ গ্রহণ করেছি।’’
শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে ‘শহিদ স্মরণে’র দিন মমতার সভা করার কথা ঠিক হয়। যার পাল্টা হিসাবে কাঁথির একটি সভামঞ্চ থেকে শুভেন্দু জানান, তিনিও মমতার সভার পরদিনই নন্দীগ্রামে সভা করবেন। এ নিয়ে দেলর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে তিনি ছাড়ও পেয়েছেন।
মমতা-শুভেন্দু ‘লড়ায়ে’র প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়েছে নন্দীগ্রামে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব গোকুলনগরের মাঠে সভার সব আয়োজন শুরু করেছেন। তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ী রাস্তা। হেলিপ্যাড বানানোরও প্রস্তুতি চলছিল বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে, এ দিন সামনে আসে ৭ জানুয়ারি মমতা নন্দীগ্রামে সভা করছেন না। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ওই সভার আয়োজনের দায়িত্বে থাকাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অখিল গিরি। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হয়ে তাঁকে গত রবিবার রাতেই কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। যার জেরে সভা পিছিয়ে যাচ্ছে।
এ দিন অখিলের ছেলে তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘বাবার জ্বর হয়েছিল। লালারসের নমুনা পরীক্ষা করলে তাঁর করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে। আপাতত তিনি কলকাতার বেলেঘাটা আইইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উনি অসুস্থ থাকার জন্য নন্দীগ্রামের মুখ্যমন্ত্রীর সভা আপাতত পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব।’’
তবে মমতার সভা পিছলেও ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামের ভাঙাবেড়ার শহিদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে সভা করবেন সুব্রত। তবে সভাস্থল গোকুলনগর নয়, নন্দীগ্রাম কলেজের মাঠ। এ ব্যাপারে নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের-সহ সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান এ দিন বলেন, ‘‘অখিলবাবুর অসুস্থতার কারণে ৭ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর সভা পিছিয়ে কয়েকদিন পরে হবে। তবে ওই দিন নন্দীগ্রাম কলেজ ময়দানে দলের কর্মিসভা হবে। সেখানে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী উপস্থিত থাকবেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি চলবে। এ নিয়ে মঙ্গলবার নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধে ব্লক নেতৃত্বদের নিয়ে সভাও হবে।’’
এ দিকে মমতার সভা পিছলেও ৮ জানুয়ারি শুভেন্দুর সভা হচ্ছেই। সে কথা জানিয়েছেন দলের জেলা নেতৃত্ব। মমতার সভা বাতিল প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘যিনি বিধায়ক, তিনি রামনগরের। আর যাওয়ার কথা ছিল নন্দীগ্রামে। উনি (অখিল) এসে এখানে লোক জমায়েত করে দেবেন! নিজের এলাকায় চারটে লোক নেই। ভয় পেয়েছেন দিদিমণি। যাওয়ার ইচ্ছে নেই বোধয়। নন্দীগ্রামের ইতিহাস শেষ হয়ে গিয়েছে। ভাঙিয়ে বেশি দিন খাওয়া যাবে না।’’