তমলুকের বর্গভীমা মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরোচ্ছেন অভিজিৎ। — নিজস্ব চিত্র।
বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে এলেন বিজেপি নেতা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আনন্দবাজার অনলাইন আগেই জানিয়েছিল, অভিজিৎকে নিয়ে মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে যাবেন ‘গাইড’ শুভেন্দু। সেই মতোই তাঁর প্রথম তমলুক সফর শুরু করলেন হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তমলুকে পৌঁছনোর পর অভিজিৎকে ঘিরে বিজেপি কর্মী, সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। পাল্টা, ‘লোভী’ অভিজিতের নামে তমলুকে পোস্টার তৃণমূলের।
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হলেও এখনও তমলুকের প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিজেপি। যদিও জল্পনা, ওই আসনে পদ্মফুল প্রতীকে লড়াই করবেন অভিজিৎ। মঙ্গলবার সকালে নিজের সম্ভাব্য লোকসভা কেন্দ্র তমলুকে পৌঁছোন অভিজিৎ। তাঁকে ঘিরে বিজেপি কর্মী, সমর্থকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ তমলুকের বিজেপি কর্মীরা বাইক র্যালি করে অভিজিৎকে নিয়ে আসেন। তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করেন শুভেন্দু। এর পর শুভেন্দু তমলুক সাংগঠনিক জেলার বিজেপির পার্টি অফিসে অভিজিৎকে নিয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন জেলার প্রথমসারির বিজেপি নেতা, কর্মীরা। অভিজিৎ বলেন, “কেউ কেউ বিরোধিতা করবেন। তাঁদের বিরোধিতা করতে দিন। তবে সারা বাংলায় এটা ছড়িয়ে দিতে হবে যে, তৃণমূলকে একটিও ভোট নয়।” অভিজিত আরও বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে দেশের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তবে এরই পাশাপাশি এই রাজ্য থেকে তৃণমূলকে পুরোপুরি উৎখাত করতে হবে। তার জন্য আমাদের এখন থেকেই জোটবদ্ধ হতে হবে।” সাংসদ হলে কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেবেন, এই প্রশ্নে অভিজিতের জবাব, “আগে তো আমার নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হোক, তার পর না হয় সাংসদ হিসেবে কী করতে চাই, সেই বিষয়ে জানাব।” অভিজিৎ জুড়ে দেন, “এই মুহূর্তে এলাকার মানুষের কাছে তৃণমূলকে উৎখাত করার বার্তা নিয়েই হাজির হয়েছি।” তমলুক প্রসঙ্গে অভিজিতের জবাব, ‘‘এলাকার মানুষের উন্মাদনা, উচ্ছ্বাস দেখে খুব ভাল লাগছে। আমি অভিভূত।’’ শুভেন্দুও আক্রমণ করেন রাজ্যের শাসকদলকে। নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, “এই রাজ্যের আঞ্চলিক দল দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এমন দলের রেজিষ্ট্রেশন এখনই বাতিল করা উচিত।” নেতা, কর্মীদের সঙ্গে তমলুকের বর্গভীমা মন্দিরে পুজোও দেন অভিজিৎ। শুভেন্দুর সঙ্গেই প্রথম বার নন্দীগ্রামেও যাচ্ছেন অভিজিৎ। এলাকার জমি চিনতে সম্ভাব্য কেন্দ্রে অভিজিতের এই সফর বলে মনে করা হচ্ছে।
নন্দীগ্রামের পর অভিজিৎকে সঙ্গে নিয়ে কাঁথি যাওয়ার কথা শুভেন্দুর। অধিকারীদের বাড়ি শান্তিকুঞ্জেও যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। সেখানে গিয়ে তিনি দেখা করতে পারেন শুভেন্দুর পিতা, তথা কাঁথির বিদায়ী সাংসদ শিশির অধিকারীর সঙ্গে।
তবে, চুপ করে বসে নেই তৃণমূলও। তমলুকের বিভিন্ন দেওয়ালে অভিজিতের বিরোধিতা করে পোস্টারের দেখা মিলেছে। যে পোস্টারে অভিজিৎকে ‘লোভী’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। পোস্টারগুলির নীচে নাম লেখা তাম্রলিপ্ত পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সহ-সভাপতি পার্থসারথি মাইতির। তিনি বলেন, ‘‘অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেকে সৎ বলে দাবি করেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায়দান করেই জনপ্রিয় হয়েছেন বলে দাবি করেন। সেই তিনিই কি না রাজনীতিতে এলেন ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণ করতে! অভিজিৎ অত্যন্ত লোভী। একমাত্র সেই কারণেই তিনি দেশের সব থেকে বড় চোরেদের দলে নাম লিখিয়েছেন। পোস্টার দিয়ে সেই প্রশ্নই আমরা তুলেছি।’’
সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণার আগেই ভোটের উত্তাপে ফুটতে শুরু করেছে তমলুক।