মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি স্লোগান দেব। সিএএ মানি না, ধর্মবিদ্বেষ মানি না, বর্ণবিদ্বেষ মানি না।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিএএ আইন ছুড়ে ফেলে দিন। আপনারা বহাল তবিয়তে থাকবেন। কেউ নাগরিকত্ব কাড়তে এলে বুঝে নেব। সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে। উদ্বাস্তুদের পাট্টা দিচ্ছি। তাদের আর উদ্বাস্তু হতে দেব না। সকলের ভিটেমাটি কাড়ার চেষ্টা চলছে।’’
বিজেপি শিখ দেখলে বলে খলিস্তানি, মুসলিম দেখলে বলে পাকিস্তানি আর বাঙালি দেখলে বলে বাংলাদেশি! হাবড়ার সভা থেকে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি বাঙালিদের সহ্য করতে পারে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূলের সবাই চোর নয়। সিপিএম থেকে আসা কয়েক জন চোর হতে পারে। বিজেপির সবাই চোর। ঘরে ঘরে ইডি-সিবিআই পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমাদের একটা ছেলেকে ডেকে বোঝানো হয়েছিল। বিজেপির কোনও জায়গায় প্রচার করতে বারণ করা হয়। বিজেপির কথা শুনতে বলা হয়। বিজেপি ভয়ানক এবং কুৎসিত দল। ওরা আসল হিন্দুদের মানে না। ওরা রামকৃষ্ণ, পঞ্চানন বর্মা, সারদা মা, মতুয়া ঠাকুরদের মানে না। আমাদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করতে চাই। শুধু আমার সঙ্গে পারে না। ওরা আমাকে লাঠি দেখালে আমি ডান্ডা দেখায়।’’
মমতা জানান, সিএএ কী ভাবে রূপায়ণ হবে, তা নিয়ে পরিষ্কার ভাবে কিছু জানানো হয়নি আইনে। তফসিলি, আদিবাসী, মতুয়াদের সংরক্ষণ নিয়ে কী হবে, তা-ও পরিষ্কার করা নেই। তিনি বলেন, ‘‘সিএএ বাংলাকে আবার ভাগ করার খেলা। মুসলিম, নমঃশূদ্র, বাঙালিদের তাড়ানোর খেলা এটা। আমরা এটা করতে দিচ্ছি না। দেব না। আমরা সবাই নাগরিক। সিএএ করলে যাঁরা নাগরিক, তাঁরা অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবে।’’
মমতা জানান, বাংলায় কারও নাগরিকত্ব যেতে দেবেন না তিনি। অন্য রাজ্যের দায়িত্ব তারা বুঝে নেবে। তিনি বলেন, ‘‘কাউকে বাংলা থেকে বিতাড়িত হতে দেব না। সারা ভারতবর্ষে যদি কোনও দিন সুযোগ আসে, তখন আমরা কিছুতেই এই সব করতে দেব না। এনআরসিও করতে দেব না।’’
বিজেপির দিকে হুঙ্কার ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি মতুয়াদের নিয়ে ভাবে না। ওদের যা ভাল করার আমরা করেছি। মমতাবালা ঠাকুর করেছেন। ওরা শুধু ভুল বুঝিয়েছে।’’
নমঃশূদ্রদের আধার কার্ড কেন বাতিল করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ওরা ফর্মে বাবার জন্মের শংসাপত্র আনতে বলেছে। আমার কাছে বাবার জন্ম শংসাপত্র নেই। অনেকের কাছেই নেই। অনেকে খুশি হচ্ছে। কতটা ভয়ঙ্কর বুঝতে পারছেন না।’’
সিএএ মানবিকতার বুকে অপমান। মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, সিএএ হলে সবাই সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। সিএএকে জুমলা বলেও মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মনে রাখবেন সব হারাবেন। ওরা ভাঁওতা দিচ্ছে। সব দিক যাবে। ইচ্ছা করে কালকের দিনটা বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ কাল থেকে রমজান শুরু হয়েছে। এই সিএএ, এনআরসির সঙ্গে যুক্ত মনে রাখবেন। শুধুমাত্র আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আনা হবে। শ্রীলঙ্কা, মায়নমার বাদ। এমন অনেক পরিবার রয়েছেন, যাঁদের এ পার বাংলা থেকে ও পার বাংলায় বিয়ে হয়েছে। তাঁরা যোগাযোগ করতে পারবেন না। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব কখনও কেউ শুনেছেন?’’
সিএএ বিজেপির লুডো খেলার ছক্কা। মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আবেদন করার পর এনআরসি করা হবে। ডিটেনশেন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বাংলা থেকে তা করতে দেব না।’’
মমতা বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে প্রতারণা, ছলনা, বঞ্চনা, নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি। যে সিএএ-র কথা কেন্দ্রের সরকার ঘোষণা করেছে, আদৌ তা বৈধ কি না সন্দেহ আছে। পুরোপুরি ভাঁওতা। ২০১৯ সালে অসমে ১৩ লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। অনেকে আত্মহত্যা করেন।’’
সারা রাজ্যের মানুষের জন্য আট হাজার টাকার প্রকল্প উদ্বোধন হল। হাবড়ার মঞ্চ থেকে জানালেন মমতা। তিনি জানান, উত্তর ২৪ পরগনা ছাড়াও ৬৪৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করা হল মঙ্গলবার। কয়েক লক্ষ মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে যাবে বলে জানালেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি ভবিষ্যতে যে অশান্তির খেলা খেলার চেষ্টা করবে, সেটা আমি যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করব। তার জন্য আমাকে সময় দিতে হবে।’’
হাবড়ার মঞ্চে তৃণমূল বিধায়ক তথা শিল্পী অদিতি মুন্সীকে কীর্তন গাওয়ার অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
হাবড়া পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তুলে দেন মমতা। প্রতিবন্ধীদের হাতে তুলে দেন শংসাপত্র। এ ছাড়াও মানুষের তুলে দেন কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজশ্রী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড-সহ একাধিক প্রকল্পের সুবিধা।
মৎস্যজীবীদের হাতে মৎস্যজীবী ক্রেডিট কার্ড তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। একটি শিশুর হাতে চারাগাছও তুলে দেন।
হাবড়া গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলা ১২টা নাগাদ ডুমুরজলা হেলিপ্যাড গ্রাউন্ড থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে হাবড়ার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। হেলিকপ্টারে চড়ার আগে তিনি বলেন, ‘যা বলার হাবড়া গিয়ে বলব’।
দেশ জুড়ে সোমবার চালু হয়েছে সিএএ। তার পরেই মমতা বলেছিলেন, ‘‘আগে নিয়মকানুন দেখে নিই। সিএএ নিয়ে যা বলার তা হাবড়ার সভায় গিয়ে বলব।’’ সিএএ নিয়ে মমতা হাবড়ায় কী বলেন, সে দিকে নজর রাজ্যবাসীর।
সকাল ১১টা নাগাদ হাওড়ার ডুমুরজলা হেলিপ্যাড গ্রাউন্ড থেকে মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে হাবড়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। হাবড়ার সভা সেরেই উত্তরবঙ্গ রওনা হওয়ার কথা মমতার।
উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সভা। এই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি বেশ কিছু প্রকল্পের সূচনাও করবেন। হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রেশন দুর্নীতি মামলায় বর্তমানে ইডির হেফাজতে। জ্যোতিপ্রিয়ের অনুপস্থিতিতে হাবড়ায় মমতার এই সভা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।