সূর্য চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
দিন আনি, দিন খাওয়া পরিবার। কোনও রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে সংসার। সেই সংসারের মেধাধী সদস্যকে স্কুলের শিক্ষকেরা একটি পরীক্ষায় বসতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। আর পরীক্ষাটিতে সফল হয়েই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’য় একটি প্রশিক্ষণের জন্য ডাক পেয়েছে হলদিয়ার এক স্কুল ছাত্র সূর্য চক্রবর্তী।
সূর্য হলদিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মহম্মদপুরের বাসিন্দা। পড়ে সুতাহাটা জনকল্যাণ শিক্ষা নিকেতনের নবম শ্রেণিতে। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। বাবার বাধা ধরা আয়ের কোনও উৎস নেই। মা গৃহবধূ। কার্যত নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা সূর্যদের। দারিদ্র এই পরিবারের সন্তান বিজ্ঞানে আসক্ত। প্রথাগত পড়াশোনা বাইরেও বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে তার অগাধ আগ্রহ। স্কুলের শিক্ষকেরা এই ছাত্রের মেধার উপলব্ধি করতে পারেন।
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনে-র (ইসরো) তরফে সম্প্রতি একটি জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়ে অনলাইনে পরীক্ষা হয়েছিল। ভাল ফল করাদের আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে। সূর্যকে ওই পরীক্ষা দিতে উদ্বুব্ধ করেন শিক্ষকেরা। সেই মতো সে পরীক্ষা দেয় এবং সাফল্য পায়। চলতি মাসের ১৬ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত ‘ইসরো’তেই একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে যাবে সূর্য। সুতাহাটা জনকল্যাণ শিক্ষা নিকেতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সরোজকুসুম দাশ বলেন, ‘‘সূর্য যে অন্য ছাত্রদের থেকে একটু ভিন্ন, তা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। স্কুলের উদ্যোগেই ইসরোর পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ করানো হয়। নিজের স্কুলের এক পড়ুয়া এত বড় জায়গায় সুযোগ পেয়েছে এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে! আর্থিক কারণে ওর পড়াশোনা যাতে থেমে না যায় সে ব্যাপারে স্কুলের তরফে নজর রাখা হবে।’’
ছেলে সাফল্য খুশি সূর্যের মা প্রণতী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ইসরোর চিঠি পাওয়ার পর খুশি হয়েছি। কিন্তু যাওয়া-আসার ভাড়া নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। পরে ইসরোর তরফেই এই যাওয়া-আসার ভাড়া দেওয়া হবে শুনে চিন্তা কেটে গিয়েছে।’’ ভবিষ্যতে বিজ্ঞান চর্চার পথেই এগিয়ে যেতে চায় সূর্য। সে বলছে, ‘‘শিক্ষকেরা যেমন সাহায্য করেছেন তেমন গুগল এবং ইউটিউব দেখেও অনেক কিছু শিখেছি। আগামী দিনে মহাকাশ বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা রয়েছে।’’