আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওই নাবালিকার প্রেমিক জিৎকে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।
প্রেমিকের ‘কথা মতো’ ঠান্ডা পানীয়তে বিষ মিশিয়ে মাকে খাইয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে নাবালিকা মেয়ের বিরুদ্ধে। ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ মেয়েটির প্রেমিক ও প্রেমিকের বাবা-মার বিরুদ্ধেও। শুক্রবার আদালতে তোলা হলে নাবালিকাকে জুভেনাইল হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার প্রেমিক জিৎ আঢ্যকে তিন দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জিতের বাবা-মায়ের জেল হেফাজত হয়েছে।
ঘটনাটি কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত মেদিনীপুর শহরের পটনাবাজার এলাকায়। বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ জানান মৃতার স্বামী। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর নাবালিকা মেয়ে, মেয়ের প্রেমিক এবং তার বাবা-মা স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য দায়ী। চার জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রেমিকের বাড়ি শহরের মহাতাবপুর এলাকায়। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ১০৯, ১২০বি, ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। অর্থাৎ খুন, ষড়যন্ত্র, এবং প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই নাবালিকা একটি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া। অভিযোগ পাওয়ার পর গ্রেফতার করা হয় নাবালিকার প্রেমিক জিৎ আঢ্য, তার মা লেখা সরকার আঢ্য এবং বাবা রঞ্জিত আঢ্যকে।
নাবালিকার প্রেমিক জিৎকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে নিতে চেয়ে আবেদন জানায় পুলিশ। তাঁকে তিন দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৫ এপ্রিল, পয়লা বৈশাখের দিন অসুস্থ হয়ে মারা যান নাবালিকার মা। তাঁদের একটি দোকান রয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, সেখানে ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়েছিল তাঁর মেয়ে। পরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই মহিলা মারা গিয়েছেন বলে স্থানীয় চিকিৎসক ঘোষণা করেন। তার পর দেহ দাহ করে দেওয়া হয়।
এ যাবৎ এই মৃত্যুর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে কেউ ভাবেননি। শুক্রবার দুপুরে নাবালিকা তার প্রেমিকের সঙ্গে চ্যাট করার সময় সেই বাক্যালাপ কোনও ভাবে দেখে ফেলেন পরিবারের সদস্যরা। সেই চ্যাট দেখে পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন, ওই প্রেমিকের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঠান্ডা পানীয়তে বিষ জাতীয় কিছু মিশিয়ে মাকে খাইয়ে ছিল মেয়েটি। পুলিশ জানতে পারে, প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার কথা বলতেন তার মা। তা থেকেই পরিবারের অন্য সদস্যদের ধারণা হয়, প্রেমিকের পরিবারের সঙ্গে যোগসাজশ করেই মাকে খুন করা হয়েছে। মেয়েটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে নাবালিকা-সহ চার জনকে। পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রেমিক কারিগরি শিক্ষার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ঠান্ডা পানীয়তে কী মেশানো হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।