২০১৫ সালে পিংলা বিস্ফোরণ। ছবি: পিটিআই।
বছর আটেক আগে, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার ব্রাক্ষ্মণবাড়ে বেআইনি বাজি কারখানায় পরপর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল গোটা এলাকা। ৯জন শিশুশ্রমিক-সহ প্রাণ গিয়েছিল ১৩ জনের। ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শনিবার তাদের দোষী সাব্যস্ত করল মেদিনীপুর আদালত। কাল, সোমবার সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা।
ঘটনার তদন্ত করেছে সিআইডি। মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন নীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সিআইডি- র এক কর্তা মানছেন, ‘‘শনিবার তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। সোমবার এই মামলায় সাজা ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।’’
দিনটা ছিল ২০১৫ সালের ৬ মে। সেই রাতে ব্রাক্ষ্মণবাড়ে বেআইনি বাজি কারখানায় পরপর বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল ৯ জন শিশুশ্রমিক সহ ১৩ জনের দেহ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন দাবি করেছিলেন, ওখানে বিয়েবাড়ির বাজি তৈরি হচ্ছিল। গোড়ায় তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশই। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্তভার হাতে নিয়েছিল সিআইডি। মেদিনীপুরের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলেছে। বেশ কিছু দিন আগেই সাক্ষ্যগ্রহণপর্ব শেষ হয়।আর মুখ্যমন্ত্রী বিয়েবাড়ির বাজির তত্ত্ব দিলেও পরে তাঁর সরকারের ‘ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ’ বা আইবি অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে জানিয়েছিল, পটকা- বাজি তো বটেই, দেশি বোমাও তৈরি হত ওই বেআইনি কারখানায়।
সিআইডি সূত্রে খবর, পিংলার ওই ঘটনায় তৃণমূলকর্মী রঞ্জন মাইতি, রঞ্জনের ভাই নিমাই মাইতি-সহ তিন অভিযুক্তই গ্রেফতার হয়েছিল। বেআইনি বাজি কারখানাটি ছিল রঞ্জনদের। এই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তরা কয়েকবার হাই কোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছিল। প্রতিবারই তা খারিজ হয়েছে। তবে শুরুতে খুন কিংবা খুনের চেষ্টার ধারা রাখা হয়নি মামলায়। পরে খুনের ধারা যোগ করা হয়েছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ছিল, মামলা লঘু করতেই প্রথমে খুন কিংবা খুনের চেষ্টার ধারা রাখা হয়নি। পাশাপাশি, মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই যেখানে শিশুশ্রমিক, সেখানে ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টে’র ধারা কেন থাকবে না, সেই প্রশ্নও উঠেছিল। পরে মামলায় নতুন করে আরও দু’টি ধারা যুক্ত করেছিল সিআইডি। খুনের ধারার (৩০২) পাশাপাশি ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টে’র ২৬ নম্বর (কেয়ার এন্ড প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন) ধারা যুক্ত করা হয়েছিল।
খুনের ধারা যুক্ত করার ক্ষেত্রে সিআইডি সূত্রের ব্যাখ্যা ছিল, ‘ইনটেনশন’ (উদ্দেশ্য) বা ‘নলেজ’ (জ্ঞান), তদন্তে যে কোনও একটির যোগ মিললেই, মামলায় ৩০২ ধারা যুক্ত করা যায়। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ‘ইনটেনশন’ ছিল না, কিন্তু ‘নলেজ’ ছিল। অর্থাৎ, তারা জানত, ওই কারখানায় যে সব সামগ্রী মজুত রয়েছে, তাতে আগুন লাগলে, বিস্ফোরণ হলে, প্রাণহানি হতে পারে। সিআইডি সূত্রে খবর, ঘটনার পরপরই মুস্তাক শেখ নামে বিস্ফোরণে জখম এক কিশোরের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর আদালতে। মুর্শিদাবাদের সুতির বাসিন্দা এই কিশোর ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ছিল। জোরালো সব তথ্যপ্রমাণই জোগাড় করেই এগিয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা।
আপাতত বিচারের বাণী শোনার অপেক্ষায় ব্রাহ্মণবাড়।