অসমাপ্ত নীল-সাদা রং করা মশানজোড় বাঁধ।—ফাইল চিত্র।
মশানজোড় বাঁধের রং আবার নীল-সাদা হবে। ঝাড়খণ্ডে ভোটের ফল স্পষ্ট হতেই সোমবার হুঙ্কার ছাড়লেন বীরভূম তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী ময়ূরাক্ষী নদীর এই বাঁধের রং আগের লাল-সাদা থেকে নীল-সাদা করা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বিজেপি শাসিত ঝাড়খণ্ডের সম্পর্ক চলতি জানুয়ারিতে যথেষ্ট তিক্ত হয়েছিল। বাঁধের দিকে তাকালে ‘চোখ তুলে নেওয়ার’ হুমকিও দিয়েছিলেন পড়শি রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী লুইস মারান্ডি। এ দিন সিউড়িতে অনুব্রত বলেন, ‘‘একশো শতাংশ নীল-সাদা হবে! মশানজোড় তো আমাদের ভাগ, অন্যায় করেছিল বিজেপি। কিন্তু আমি মনে করি জোট সরকার অন্যায় করবে না।’’
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে যখন সমুখসমরে নেমেছে এ রাজ্যের শাসকদল, তখন ঝাড়খণ্ডে বিজেপি পর্যুদস্ত হওয়ায় সে রাজ্য ঘেঁষা জেলাগুলির তৃণমূল নেতারাও উজ্জীবিত। বীরভূমে রামপুরহাট মহকুমার এক বিস্তীর্ণ তল্লাট ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন। রামপুরহাটের বিধায়ক তথা কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি সরকারের আগ্রাসী নীতি সাধারণ মানুষ যে আর পছন্দ করছেন না, তা আবার প্রমাণ হল।’’
আগামী বছর আসানসোল পুরভোট হওয়ার কথা। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির বক্তব্য, ‘‘ওখানে যখন বিজেপি সরকার ছিল, প্রধানমন্ত্রী আসানসোলে এসে বলেছিলেন, ঝাড়খণ্ডের হাওয়া আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। এ বার সরকার পড়ে যাওয়ায় নিশ্চয় ওদের সেই হাওয়ার ক্ষতি হয়েছে। তার প্রভাবও এখানে পড়বে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘প্রভাব কিছুই পড়বে না।’’
আরও পড়ুন: পড়ুুয়া বিক্ষোভে বিদায়, কিন্তু আজও যাদবপুর যাবেন, বললেন ধনখড়
বিজেপির হারকে মুর্শিদাবাদের ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া জঙ্গিপুর মহকুমার মানুষজন ও শাসকদলের নেতারা এই ফলকে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রায় হিসেবেই দেখছেন। এ দিন রঘুনাথগঞ্জে তৃণমূল বিশাল মিছিল করে। মন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘‘এই ফল এনআরসি বিরোধী আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দেবে।” সাংসদ খলিলুর রহমানের বক্তব্য, ‘‘নাগরিকত্ব বিল নিয়ে মানুষের ক্ষোভেরই প্রতিফলন হয়েছে ঝাড়খণ্ডে।” ডোমকলের বাসিন্দা জহিরুল ইসলামের কথায়, ‘‘ঝাড়খণ্ডের মানুষ প্রমাণ করলেন, ভারতবর্ষে জাতপাতের বিভেদ করলে হাল কী হবে।’’
পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা— মালদহের আদিবাসী-প্রধান ব্লকগুলিতে নির্বাচনে সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির এ রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক মোহন হাঁসদা অবশ্য এ দিন বলছেন, ‘‘তৃণমূলের বিরোধিতা করেই মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিলেন। আদিবাসীরা ভেবেছিলেন বিজেপি তাঁদের জন্য কাজ করবে। বাস্তবে তা হয়নি।’’
আরও পড়ুন: ছেলেদের কথা শুনে ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধ
আদিবাসী সিঙ্গল অভিযানের মালদহের নেতা বিনয় বেসরার দাবি, ‘‘ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ডে অনেক আদিবাসীর নাম ভুল রয়েছে। এনআরসি, নতুন নাগরিকত্ব আইনের ভয়ে কাজ ফেলে তা সংশোধন করতে যাচ্ছেন সকলে। অথচ, আদিবাসীরা এ দেশের পুরনো বাসিন্দা। বিজেপির তরফে এমন হয়রানির বিরুদ্ধে তাঁরা এ বার বাংলাতেও রায় দেবেন।’’