জিটি রোডে টোটো। শ্রীরামপুরে। —ফাইল চিত্র।
টোটোতে ছয়লাপ শ্রীরামপুর শহর। টোটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধা নিয়ে চর্চা সর্বত্র। কিন্তু এর দৌরাত্ম্যে লাগাম পরবে কবে, উত্তর মিলছে না।
শ্রীরামপুরে কত টোটো চলে, তাতে পুরসভার কত রাজস্ব আদায় হয়, কত টোটোর রেজিস্ট্রেশন রয়েছে, নম্বর প্লেটহীন টোটো কত— তথ্য জানার অধিকার আইনে এই সব প্রশ্নের উত্তর চেয়ে শ্রীরামপুরের পুরপ্রধানের কাছে দরখাস্ত করেছেন আইনজীবী তথা রাজ্য বিজেপি নেতা ভাস্কর ভট্টাচার্য। এ শহরেরই বাসিন্দা ভাস্করের অভিযোগ, প্রশাসনের বিন্দুমাত্র নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই শ’য়ে শ’য়ে টোটো চলছে। নম্বর প্লেট না থাকায় তারা কোনও ঘটনা ঘটালে অভিযোগ করার উপায় পর্যন্ত থাকছে না।
টোটো নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ সাল থেকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের নানা দফতরকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। শহরের টোটোর রুট তৈরি, বাইরের টোটোয় রাশ টানা-সহ নানা পরিকল্পনা হয়েছে। কার্যকর হয়নি। অনেক টোটোচালকেরই আক্ষেপ, টোটো সংখ্যায় এত বেড়ে গিয়েছে, সে ভাবে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। তার উপরে শহরের মূলত একটি এলাকার টোটো স্টেশন চত্বর দখল করে থাকে। টোটোচালকদের একাংশের ‘দাদাগিরি’র অভিযোগও আকছার শোনা যায়।
পুরপ্রধান গিরিধারী সাহার বক্তব্য, আগে টোটো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলেও কার্যকর করা যায়নি। টোটোর বিষয়টি পুরসভার হাতে নেই। রাজ্য সরকার টোটো-নীতি প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে। অন্য পুরসভার মতো এখানেও টোটো গণনা করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘টোটো-নীতি হলে সমস্যা মিটবে। সরকার এ নিয়ে কোনও নির্দেশিকা দিলে পালন করব।’’ সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় টোটো থেকে রাজস্ব আদায় হয় না। বিমা না থাকায় টোটো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ মেলে না।
সরকার পদক্ষেপ করলেও ভবিষ্যতেও টোটো আদৌ কতটা নিয়মে আনা যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বহু মানুষ। অনেকে মনে করেন, কল-কারখানায় কাজের অনিশ্চয়তা, কর্মসংস্থানের অভাবের জেরেই টোটোর রমরমা। তবে ‘প্রভাবশালী’দের কেউ কেউ বকলমে টোটো ভাড়া খাটান বলেও অভিযোগ। আশপাশের রিষড়া, বা শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটী শহর, পিয়ারাপুর, রাজ্যধরপুর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বহু টোটো শ্রীরামপুরে এসে দিনভর ভাড়া খাটে। তাতে পরিস্থিতি নাগালের আরও বাইরে চলে যায় বলে অভিযোগ। শ্রীরামপুরে দৈনিক তিন হাজারের বেশি টোটো চলে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
অনেকের দাবি, শাসক দলের নেতাদের একাংশের মদতে টোটোর বাড়বাড়ন্তে রাশ টানা যায়নি। পুর-পারিষদ তথা শহর তৃণমূল সভাপতি সন্তোষ সিংহের বক্তব্য, ‘‘টোটোর কারণে মানুষের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে, এ ব্যাপারে আমি সহমত। তবে নেতাদের মদতে এই পরিস্থিতি, আমি মনে করি না।’’