মহম্মদ রিয়াজুদ্দিন
গেট বন্ধ হচ্ছে না, তবু ঠেলেঠুলে যাত্রীরা উঠছেন। বেশ কয়েক বারের চেষ্টায় গেট বন্ধ হওয়ার পর যখন ট্রেন স্টেশন ছাড়ল, তখন দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের প্রায় দমবন্ধ করা অবস্থা। মেট্রোয় চড়লে এ রকম অভিজ্ঞতার সঙ্গেই অভ্যস্ত ছিলাম বেশি।
রবিবার সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট দিতে গিয়ে অভিজ্ঞতাটা একেবারে অন্য রকম হল। শুনেছিলাম, দূরত্ববিধি বজায় রেখে পরীক্ষার্থীদের গন্তব্যস্থলে নিয়ে যাবে মেট্রো। হাওড়ার আলমপুরের একটি স্কুলে আমার সিট পড়েছিল। পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য তাই মেট্রোকেই বেছেছিলাম। প্রথমে দমদম থেকে মেট্রোয় ধর্মতলা। সেখান থেকে বাসে আলমপুর। ফেরাও ওই ভাবেই।
আমার বাড়ি এমনিতে বীরভূমে রামপুরহাটের কাছে তারাপীঠ থানা এলাকার বুটিগ্রামে। বাবা মহম্মদ খোদা রাখা চাষবাস করেন। বারুইপুরে আল-আমিন মিশন স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছি। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে। মাঝেমধ্যেই গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখেছি গ্রামে চিকিৎসকের অভাব। তাই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। লকডাউনে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। তবে দাদা দমদমের মেসে থেকে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দমদমেই থেকে গিয়েছিল। নিট পরীক্ষা দিতে এসে দাদার মেসেই ঘাটি গেড়েছি।
এ দিন সকাল দশটায় মেট্রো চালু হওয়ার কথা ছিল। আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম দশটার একটু আগেই। দমদম স্টেশনে আমার অ্যাডমিট কার্ড দেখে তার পরই আমাকে আর আমার দাদাকে মেট্রো স্টেশনে ঢুকতে দিলেন কর্তব্যরত মেট্রো কর্মী এবং পুলিশরা। তার পর থার্মাল গান দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা, হাত স্যানিটাইজ় করার পরে টিকিট কাউন্টারে যাওয়ার অনুমতি মিলল। কাউন্টার থেকে পেপার টিকিট কিনে সিঁড়ি দিয়ে উপরে প্ল্যাটফর্মে এসে দেখলাম প্রায় শুনশান স্টেশন। এ রকম মেট্রো প্ল্যাটফর্ম কোনওদিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কোনও রবিবারেও নয়। আমার মতো গুটিকয়েক পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকরাই দাঁড়িয়ে রয়েছি। ট্রেন আসতে ধীরেসুস্থে উঠলাম। এক-একটা সিটে সবাই ছড়িয়ে বসেছিলাম। কামরায় বড়জোড় দশ থেকে পনেরো জন। দমদমের পর এমনিতে অন্য সময় বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার থেকে যে ভাবে হুড়মুড়িয়ে যাত্রীরা ওঠেন, সেই সব এ দিন উধাও। খুব কম পরীক্ষার্থীই উঠলেন মাঝপথে।
তবে এ দিন মেট্রো চালু হওয়ায় আমার অন্তত খুবই উপকার হয়েছে। দূরত্ববিধি বজায় রেখে দমদম থেকে ধর্মতলা খুব দ্রুত চলে যাওয়া গেল। মেট্রো না চললে বাড়ি থেকে আরও আগে বেরোতে হত। ধর্মতলা থেকে আলমপুরগামী বাসেও একেবারেই ভিড় ছিল না। ফেরাও গেল ফাঁকায় ফাঁকায়। পরীক্ষা ভালই হয়েছে। ফিরতি পথেও মেট্রোয় আসতে আসতে ভাবছিলাম, এখন যা পরিস্থিতি তাতে এ ভাবেই যেন দূরত্ববিধি বজায় রেখে মেট্রো চালানো হয়। তা হলে এই করোনা-কালেও মানুষ অনেক নিশ্চিন্ত হয়ে মেট্রোয় যাতায়াত করতে পারবেন।