প্রতীকী ছবি।
করোনার দাপটে দীর্ঘ কাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পঠনপাঠন চালিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম অনলাইন। কিন্তু ওই বৈদ্যুতিন মাধ্যমে পড়াশোনার জন্য যেটা জরুরি, পশ্চিমবঙ্গের স্কুলপড়ুয়াদের ক্ষেত্রে সেই স্মার্টফোনের অভাব চোখে পড়ার মতো। প্রাইভেট টিউশনের উপরে পড়ুয়াদের নির্ভরশীলতাও বেড়েছে।
দেশের গ্রামাঞ্চলের স্কুলপড়ুয়াদের উপরে ‘প্রথম’ নামে এক সংস্থার তরফে চালানো সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্টে (আসের) ২০২১-এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে এ রাজ্যে স্কুলে নাম নথিভুক্ত না-করার প্রবণতা আগের থেকে কমেছে বলে জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে। রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ভর্তির হার বেড়েছে। রিপোর্ট বলছে, এই প্রবণতা সারা দেশেই।
অতিমারিতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলার সাফল্যের কথা আগেই জানা গিয়েছিল। আসের রিপোর্টেও তার উল্লেখ করা হয়েছে। পড়ুয়াদের পাঠ্যবই দেওয়ার ক্ষেত্রে এই রাজ্য গোটা দেশে দ্বিতীয়। রাজ্যে ৯৭.৬ শতাংশ পড়ুয়ার হাতেই পাঠ্যবই আছে। ওই রিপোর্টে অবশ্য বলা হয়েছে, সারা দেশে পড়ুয়ারা টেক্সট বুক পেলেও পঠনপাঠনের অন্যান্য সামগ্রীর অপ্রতুলতা রয়েছে।
অতিমারি পর্বে অনলাইন-পাঠে গুরুত্ব দেওয়া হলেও বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ প্রকট। অভিযোগ, অনলাইনে পঠনপাঠনের আবশ্যিক অবলম্বন স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ এ রাজ্যের বহু পড়ুয়ার কাছেই নেই। আসের রিপোর্টে উঠে এসেছে, ২০১৮ সালে রাজ্যের পড়ুয়াদের ২৬.৮% পরিবারের কাছে স্মার্টফোন ছিল। ২০২১-এ তা বেড়ে হয়েছে ৫৮.৪%। কিন্তু পড়ুয়ারা সব সময় পড়াশোনার কাজে সেই পারিবারিক স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারে না। রিপোর্ট বলছে, ৪৬.৫% পড়ুয়া তা ব্যবহারের সুযোগই পায় না।
আসের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের ৭৬.৫% পড়ুয়াই প্রাইভেট টিউশনের উপরে নির্ভরশীল। বিহারে সেই হার ৭৩.৫%। ২০১৮ সালে বঙ্গে পড়ুয়াদের মধ্যে এই নির্ভরশীলতার হার ছিল ৭৫.৮%। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও অবশ্য এই হার বেড়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে ৩০%-র কম পড়ুয়া প্রাইভেট টিউটরের সাহায্য নিত, এখন তা নেয় ৪০% পড়ুয়া।
তবে দেশের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় এই সময়কালে বঙ্গে স্কুলে নাম নথিভুক্ত না-করার হার কমেছে, জানাচ্ছে আসের রিপোর্ট। ২০১৮-তে রাজ্যের স্কুলে নাম নথিভুক্ত না-করার হার ছিল ১.৬%। চলতি বছরে তা কমে হয়েছে ১%। এই সময়ে দেশে স্কুলে নাম নথিভুক্ত না-করার হার বেড়েছে (৪.৬%)। ২০১৮-তে ছিল ২.৫%। আসের রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, স্কুলশিক্ষায় সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ২০১৮ সালে রাজ্যের ৮৮% পড়ুয়া সরকারি স্কুলে পড়ত। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৯১.৯%। এই প্রবণতা সারা দেশেই। বেসরকারি স্কুলে ছয় থেকে ১৪ বছরের পড়ুয়ার সংখ্যা ৩২.৫% থেকে কমে ২৪.৪% হয়েছে। ২০১৮ সালে সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ভর্তির হার ছিল ৬৪.৩%। চলতি বছরে তা ৬.১% বেড়েছে।
এই রিপোর্ট তৈরির আগে দেশের ২৫টি রাজ্য এবং তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলের পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সি ৭৫,২৩৪ জন পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কথা হয়েছে ৭২৯৯টি স্কুলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও।