ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন দফতরে পরামর্শদাতা নিয়োগের সরকারি তৎপরতা কি আগের মতোই রয়েছে? জল্পনা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে প্রশাসনের অন্দরমহলে।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এই জল্পনার নেপথ্যে মূলত চারটি বিষয় কাজ করছে। এক, পরামর্শদাতা নিয়োগের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে বিভিন্ন দফতরে যে প্রস্তুতি সংক্রান্ত তৎপরতা শুরু হয়েছিল, তা এখন কার্যত নেই। দুই, ২০ ডিসেম্বর পরামর্শদাতা পদে আবেদনপত্র গ্রহণ শেষ হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়ে আপাতত এবং কার্যত প্রশাসনে ‘নড়াচড়া নেই’ বলে সূত্রের দাবি। তিন, পরামর্শদাতা নিয়ে বিভিন্ন দফতর, বিশেষত আইএএস এবং ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের মধ্যে তীব্র ‘অনাগ্রহ’ কাজ করছে এবং চার, গত মন্ত্রিসভা এবং প্রশাসনিক বৈঠকে সরকারি কাজে পড়ুয়াদের ‘ইন্টার্ন’ হিসেবে নিয়োগের কথা বললেও, পরামর্শদাতা নিয়োগ নিয়ে একটা কথাও খরচ করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই সব কারণেই বিভিন্ন মহলের জল্পনা— তবে কি পরামর্শদাতাদের পরিবর্তে এখন ‘ইন্টার্ন’ নিয়োগকেই গুরুত্ব দিতে চাইছে রাজ্য? নবান্নের এক কর্তা অবশ্য জানান, পরামর্শদাতারা সরকারি কাজের মানোন্নয়নে শুধু পরামর্শই দেবেন। ‘ইন্টার্ন’রা সরকারের কাজ শিখবেন। দু’টোর উদ্দেশ্য পুরোপুরি আলাদা। তবে কবে পরামর্শদাতাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে সে সম্পর্কে কিছু জানাতে না পারলেও তাঁর বক্তব্য, “নিশ্চয় প্রক্রিয়া চলছে। থামিয়ে দেওয়ার তো কোনও ঘোষণা হয়নি এখনও। আবেদনপত্র গ্রহণের শেষ দিনের পরে সবে তো দেড় মাস হয়েছে। দেখা যাক!”
৫০ জন পরামর্শদাতা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, ৩৫-৭০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ পেশাদারেরা এই পদের জন্য আবেদন করতে পারেন। সিনিয়র পরামর্শদাতাদের জন্য মাসে ২ লক্ষ এবং পরামর্শদাতাদের জন্য প্রতি মাসে দেড় লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করেছিল রাজ্য। আবেদন খতিয়ে দেখে উচ্চ পর্যায়ের একটি সরকারি কমিটির এই নিয়োগ করার কথা। প্রাথমিক ভাবে দু’বছরের জন্য কাজ করার সুযোগ থাকবে নির্বাচিতদের। সরকারের ইচ্ছানুসারে কাজের মেয়াদ বাড়তে বা কমতে পারে।
‘ইন্টার্ন’-এর ক্ষেত্রে স্নাতক, পলিটেকনিক, আইটিআই বা সমতুল পাঠ্যক্রমে ৬০% নম্বর পেলেই ৪০ বছরের কম বয়সের পড়ুয়ারা আবেদন করতে পারবেন। বছরে ছ’হাজার পড়ুয়াকে ব্লক, মহকুমা, জেলার প্রশাসনিক কার্যালয়ে কাজ শেখার সুযোগ দেওয়া হবে। প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা করে বৃত্তি পাবেন তাঁরা। ভাল কাজ করলে এক বছর পরে এই মেয়াদ বাড়তে পারে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকবে।
প্রশাসনের একটি মহল জানাচ্ছে, সরকারির বিভিন্ন দফতরে একটি নির্দিষ্ট পরামর্শদাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের ‘নজরদারি’ চলছিলই। তা নিয়ে নবান্নের অন্দরে ছিল নানা ধরনের জল্পনা। শোনা যাচ্ছে, সম্প্রতি ওই প্রতিনিধিরা আগের মতো ‘সক্রিয়’ নেই। প্রসঙ্গত, গত প্রশাসনিক মূল্যায়ন বৈঠকে অফিসারদের সব ধরনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকার বার্তাও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সব কিছুই পরামর্শদাতা নিয়োগে প্রশাসনের অন্দরের জল্পনাকে আরও উস্কে দিচ্ছে।
পরামর্শদাতাদের কাজ কী হবে, তাঁর অফিস কোথায় হবে ইত্যাদি নিয়ে গত বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে বেশ তৎপরতা শুরু হয় বিভিন্ন দফতরে। পরে সে কথা ঘোষণাও করে রাজ্য সরকার। নভেম্বরে নিয়োগ সংক্রান্ত বিধি-নির্দেশিকা প্রকাশ করে নবান্ন। আমলা মহলের খবর, ২০ ডিসেম্বরের পরেই দফতরভিত্তিক তৎপরতা ‘থমকে যায়’। এক অফিসারের কথায়, “যে ভাবে দ্রুত সব প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাতে মনে হয়েছিল খুব তাড়াতাড়ি নিয়োগ হয়ে যাবে। কিন্তু বিগত প্রায় এক মাস ধরে সেই তৎপরতার ছিটেফোঁটাও নজরে আসছে না।”
অফিসারদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোন পদ্ধতিতে এত বড় নিয়োগ হবে তাও স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আপত্তিও রয়েছে। আবার এক্তিয়ারের প্রশ্নে ‘ভিতর’ এবং ‘বাইরের’ অফিসারদের মধ্যে ‘সংঘাত’ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও যথেষ্ট। এতে আইএএস বা ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের অধিকাংশের মধ্যে এই পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি কাজ করছে। সে জায়গায় ‘ইন্টার্ন’-দের ক্ষেত্রে এই সমস্যা নেই। পাশাপাশি উপার্জনের প্রশ্নে এই পদ্ধতি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষেও উপযুক্ত।