জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের দলুয়াখাকিতে প্রায় পনেরোটি বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। —ফাইল চিত্র।
কারা মারল সইফুদ্দিন লস্করকে? কেনই বা মারল? জয়নগরে সোমবার ভোরের এই খুনের কাটাছেড়া করতে গিয়ে এই প্রশ্নই ঘুরেছে সকলের মুখে।
খুনে জড়িত অভিযোগে ধাওয়া করে ধরে এক জনকে পিটিয়ে মেরেছে জনতা। আর এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে, দু’জনের কারও পরিচয়ই তদন্তের স্বার্থে পুলিশ প্রকাশ করতে চায়নি। তবে, পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনৈতিক কারণের চেয়ে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে খুনের তত্ত্বকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছে।
সূত্রের খবর, হত এবং ধৃত— দুই দুষ্কৃতীর কেউই এলাকার নয়। সম্ভবত উস্তির বাসিন্দা। তারা কেন ওই এলাকায় এল, সেই প্রশ্ন উঠছে। এখানেই সামনে আসছে ভাড়াটে খুনির তত্ত্ব। তৃণমূল নেতা সওকাত মোল্লা সরাসরি ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুনের অভিযোগ করেছেন। তদন্তকারীদের একাংশও মনে করছেন, বাইরে থেকে লোক এনে খুন করা হতে পারে। যে ভাবে ঘাড়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে, তাতে পাকা হাতের কাজ বলেই মনে করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে মনে করা হচ্ছে, এলাকার কোনও লোকও যুক্ত থাকতে পারে। কেন? তদন্তকারীদের একাংশের মতে, মোটরবাইক দু’টি দুর্ঘটনায় পড়ার পরে এক দল ধানখেত দিয়ে পালায়। এলাকার নাড়িনক্ষত্র চেনা না থাকলে এটা সম্ভব নয়। খুনের আগে দুষ্কৃতীরা এলাকা রেকি করে গিয়েছিল কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সইফুদ্দিন কখন কোথায় নমাজ পড়তে যান, সেটাও জানত দুষ্কৃতীরা। ভোরের দিকে এলাকা প্রায় ফাঁকা থাকে। তাই সেই সময়টাই বাছা হয়েছিল বলেও মনে করছেন তদন্তাকারীদের একাংশ।
এত কিছুর পিছনে মাথাটা কার, সেই ব্যাপারে পুলিশ কিন্তু এখনও চুপ।
এলাকায় ‘প্রভাবশালী’ বলেই পরিচিত ছিলেন সইফুদ্দিন। স্থানীয়েরা জানান, একটা সময় আদালতে মুহুরির কাজ করতেন তিনি। সেই সূত্রেই জয়নগর থানায় যাতায়াত শুরু। থানার নানা কাজ করতেন তিনি। এ ভাবে বাম আমল থেকেই তাঁর পরিচিতি বাড়তে শুরু করে। তখন তিনি সিপিএমে। ২০১৮ সাল নাগাদ তৃণমূলে যোগ দেন। স্ত্রী বামনগাছির প্রধান নির্বাচিত হন। পুলিশ মহলে প্রভাব আরও বাড়ে। স্থানীয়দের দাবি, বহু মামলায় তাঁর মাধ্যমেই ‘সমঝোতা’ হত। থানার ‘ডাক মাস্টার’ হিসেবেও পরিচিত হয়ে ওঠেন সইফুদ্দিন। বছর চারেক আগে জয়নগর থানা ভেঙে বকুলতলা থানা তৈরি হয়। সেখানেও তিনি প্রভাব বিস্তার করেন বলে স্থানীয়দের দাবি। অভিযোগ, কাঁচা টাকার আমদানি বাড়ে। বারুইপুর পূর্ব ও জয়নগর— দুই বিধানসভা এলাকাতেই বাড়ে তাঁর দাপট। রাজনৈতিক নেতা থেকে পুলিশ— সকলেরই সহায় ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তৃণমূলের ধর্নায় দিল্লিও গিয়েছিলেন।
সূত্রের খবর, বহু নেতা-কর্মীর দিল্লি যাওয়ার বিমান খরচ জুগিয়েছিলেন সইফুদ্দিন। দিল্লি থেকে কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে গোয়া ঘুরতে যান বলেও খবর। বহু নামী মানুষজনের ডায়মন্ড হারবারে নামকরা রিসর্টের থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাতেন নিয়মিত। এলাকার বহু বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্কও ছিল। আবার কারও মেয়ের বিয়ে থেকে শুরু করে, যে কোনও প্রয়োজনে অকাতরে টাকা বিলিয়েছেন বলেও একাংশের দাবি।
অনেকেই মনে করছেন, এই কাঁচা টাকার আমদানিই কাল হল। যেমনটা হয়েছিল বগটুইয়ের ভাদু শেখের ক্ষেত্রে। তবে, এ নিয়ে সইফুদ্দিনের স্ত্রী সেরিফা বিবি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যদিও তৃণমূল এখনও খুনের দায়ে আঙুল তুলছে সিপিএমের দিকে। সিপিএমের পাল্টা দাবি, টাকার বখরা নিয়ে গোলমালে দলের লোকের হাতেই খুন হয়েছেন সইফুদ্দিন।