প্রতীকী ছবি।
বিমা সংস্থার সুবিধা কেন পাওয়া যাবে না? বেসরকারি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে বার বার জানতে চাইছেন কোভিড আক্রান্তের পরিজন। আর ওই আধিকারিক কখনও নিরাপত্তা রক্ষীকে ডেকে রোগীর পরিজনকে আটকে রাখার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তো কখনও ভিডিয়ো ফুটেজে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘কী ভাবে টাকা বার করতে হয়, খুব ভাল করে জানি!’’
গত ১৭ জুলাই ই এম বাইপাস সংলগ্ন সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-আক্রান্ত রোগীকে ভর্তি করেছিল তাঁর পরিবার। বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে খবর, দিন পাঁচেক চিকিৎসাধীন থাকার পরে ৫০৪৪ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন রোগীর বিল হয়েছিল এক লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। একটি বেসরকারি সংস্থায় ওই রোগীর বিমা করানো ছিল। কিন্তু ওই সংস্থা করোনা পজ়িটিভ রোগীর বিল মেটানোর আবেদন নাকচ করে দেয় বলে অভিযোগ। এর পরেই সমস্যার সূত্রপাত।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়ো ফুটেজে রোগীর পরিজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘স্যর, আমার বাবাকে ভর্তি করার সময় বলা হয়েছিল মেডিক্লেম পাবেন...।’’ তখন ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘আপনি মেডিক্লেম কেন পাচ্ছে না তা সংস্থার সঙ্গে কথা বলুন। এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আপনি মেডিক্লেমের ভরসায় রোগীকে ভর্তি করেছিলেন কেন? এত বড় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন, আপনার জানা উচিত মেডিক্লেম না-ও পেতে পারেন।’’
আইসিইউয়ে ভর্তি করানোর কথা বিলে লেখা নেই কেন, এই প্রশ্নের উত্তরেও ফুটেজে ওই আধিকারিককে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘রোগী যেখানে খুশি থাকুক। জাহান্নমে থাকুক! স্যুটে শুয়ে থাকুক। জেনারেল বেডের রোগী হিসাবেই তো বিল করা হয়েছে।’’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, এক সময় অধস্তন কর্মীদের ওই আধিকারিক নির্দেশ দিচ্ছেন, বিল না মেটানো পর্যন্ত নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে রোগীর পরিবারকে যেন আটকে রাখা হয়। তখন ওই মহিলা বলেন, ‘‘বিল মেটাতে টাকা তো জোগাড় করতে হবে? আমাদের ছাড়ুন।’’ ছাপার অযোগ্য ভাষায় মহিলাকে ওই আধিকারিক ভর্ৎসনা করেন বলে অভিযোগ। এর পরে তিনি চলে গেলে হাসপাতালের আর এক কর্মী স্বাস্থ্যবিমা সংক্রান্ত জটিলতা বুঝিয়ে বলেন। তাতে কাজও হয়েছে বলে খবর।
ওই হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাপস মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ঘণ্টাখানেক রোগীর আত্মীয়েরা সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে উত্ত্যক্ত করেন। এর পরে তিনি মেজাজ হারালে পরিকল্পনা করে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মীদের বলেছি, রোগীর পরিবারকে যাতে ভাল করে বোঝানো হয়। কর্মীরা যাতে কেউ দুর্ব্যবহার না করেন সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’’ স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিমা সংস্থা বিল না মেটালে হাসপাতালের কিছু করণীয় নেই। কিন্তু শব্দচয়ন এবং ব্যবহার আপত্তিজনক। আর এক কর্মী যে ভাবে রোগীর আত্মীয়দের বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন, সেটাই কাম্য। কমিশন বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবে। প্রয়োজনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’’
বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, বিমা সংস্থাগুলির একাংশ কোভিড আক্রান্তের অসুস্থতা মৃদু বা মাঝারি মাপের হলে বিমার টাকা দেওয়ার প্রশ্নে সমস্যা করছে। সম্প্রতি কয়েকটি বিমা সংস্থা কোভিড সংক্রান্ত বিশেষ প্যাকেজ চালু করেছে। সেই প্যাকেজ নেওয়ার জন্য রোগীকে ঘুরিয়ে বাধ্য করা হচ্ছে কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।