Coromandel Express accident

‘কথা রাখেননি নেতা-মন্ত্রীরা, অথৈ জলে পরিবার’! চোখের জলে আক্ষেপ করমণ্ডলে মৃতের স্ত্রীর

প্রতিবেশীদের থেকে অর্থসাহায্য নিয়ে আরমান খাঁ-কে খুঁজতে বালেশ্বরে পৌঁছন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ওড়িশায় লাশের স্তূপের মধ্যে থেকে আরমানের দেহ শনাক্ত করেন তাঁরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ২২:৩৮
Share:

ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: পিটিআই।

ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার পর অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। এমনই অভিযোগ করলেন দুর্ঘটনায় মৃতের স্ত্রী মমতাজ বিবির। তাঁর দাবি, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অর্থসাহায্য নিয়ে তা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া মিটিয়ে স্বামী আরমান খাঁ-র দেহ বাড়ি ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।

Advertisement

রবিবার স্বামীর দেহের সামনে বসে চোখের জল মুছতে মুছতে মমতাজ বিবির আক্ষেপ, ‘‘নিজের লোককে হারালাম। টাকাও গেল। তবুও নেতা-মন্ত্রীরা কেউ কথা রাখলেন না। অথৈ জলে পড়ল আমাদের পরিবার!’’

৩৬ বছর বয়সি আরমান খাঁ-র বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার দেউলিয়া গ্রামে। পরিবারের জন্য অন্নের জোগান দিতে দীর্ঘ দিন ধরে দক্ষিণ ভারতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। ১৫ দিন আগে চেন্নাই থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন আরমান। কাজে যোগ দিতে শুক্রবার করমণ্ডল এক্সপ্রেসে করে চেন্নাই রওনা হয়েছিলেন। তবে চেন্নাই পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। মাঝপথেই দুর্ঘটনার জেরে বাড়ি ফিরেছে আরমানের দেহ!

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যায় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার খবর পান আরমানের বাড়ির লোকজন। পরের দিন প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে আরমানকে খুঁজতে সেখানে পৌঁছন তাঁরা। ওড়িশায় লাশের স্তূপের মধ্যে থেকে আরমানের দেহ শনাক্ত করেন। মৃতের আত্মীয় রহিম শেখ বলেন, ‘‘লাশের গাদায় খোঁজ চালিয়ে আরমানের দেহ খুজে পেয়েছি। কিন্তু দেহ নিয়ে মঙ্গলকোটের বাড়িতে ফেরার ব্যাপারে কোনও সহায়তাই পাইনি। সরকারি আ্যম্বুল্যান্সে করে নিখরচায় দেহ বাড়িতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হবে বলা হলেও সে সাহায্য পাইনি আমরা।’’

আরমানের দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে অর্থসাহায্যের আবেদন করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকার সাহায্য পেয়েছেন তাঁরা। তা দিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে আরমানের দেহ নিয়ে বালেশ্বর থেকে মঙ্গলকোটে ফেরেন।

অবশেষে আরমানের দেহ বাড়িতে এসেছে। স্বামীর নিথর দেহের পাশে বসে মমতাজ বিবি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে বার বার স্বামীকে ফোন করেছি। কিন্তু ফোন বেজে গেলেও সাড়া পাইনি। দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। সেই থেকে টিভির খবরের দিকে নজর রাখছিলাম। শনিবার বেলা গড়াতে জানতে পারি, তিনি মারা গিয়েছেন।’’ মমতাজের কণ্ঠে এ বার রোষের সুর। তাঁর কথায়, ‘‘টিভির খবরে দেখেছি, ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকার কত প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু সে সব প্রতিশ্রুতি যে ফাঁকা আওয়াজ, তা কল্পনাও করতে পারিনি। রেল হোক বা কোনও নেতা-মন্ত্রী, কাছও কাছ থেকে সাহায্য পাইনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement